×

জাতীয়

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বাড়ছে অতিথি প্রার্থীর কদর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৪ পিএম

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বাড়ছে অতিথি প্রার্থীর কদর
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে প্রবাসী অতিথি প্রার্থীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। গরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। বড় দুদলেই অতিথি প্রার্থীর কদর বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত অতিথি প্রার্থীরাই চমক দেখাতে পারেন। শরিক দলের প্রার্থী নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থী। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছেন সিনিয়র নেতারা। নিজেদের দুর্গ জেলার ৪টি আসনই বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। তবে সব আসনেই একাধিক প্রার্থীর তৎপরতার কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্গে ফাটল ধরতে পারে। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ, স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির তৎপরতা বাড়ার পাশাপাশি নেতায় নেতায় বিরোধ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে জেলা বিএনপি। এক গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হবিগঞ্জের পৌর মেয়র আলহাজ জি কে গউছ। অন্য দিকে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমিনুর রশিদ এমরান। বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে জেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি সাবেক এমপি আলহাজ সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল দলীয় কাজে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদুল রহমান আবদাল জানান, হবিগঞ্জের ৪টি আসনেই তাদের প্রার্থী প্রস্তুত। সরকার শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে সবগুলোতেই বিএনপি বিজয়ী হবে। বিএনপি কিংবা ঐক্যজোট যাকেই মনোনয়ন দেবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষেই কাজ করবে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিতে সদ্য জেলা কমিটি গঠন হবার পর দল বেশ চাঙ্গা হয়েছে। তাদের দলের সভাপতি শিল্পপতি আলহাজ আতিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুজনই প্রার্থী। এদিকে এম এ মুবিন চৌধুরী হবিগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী। তারা তিনজনই বলে বেড়াচ্ছেন দলের চেয়ারপারসন এইচ এম এরশাদ তাদের দলীয় মনোনয়ন দেবেন। এদিকে ৪ বারের উপজেলা চেয়ারম্যান পিস্যাব হিসেবে পরিচিত আলহাজ সৈয়দ আহমেদুল হক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। নির্বাচনী এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার সম্ভাবনা নেই। প্রত্যেক দলের মধ্যে রাজনৈতিক সহমর্মিতা রয়েছে। আওয়ামী লীগের গ্রুপিং ও দলীয় কোন্দলের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও বানিয়াচং উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহেনারা আক্তার বিউটি জানান, প্রধানমন্ত্রীয় শেখ হাসিনার হাত ধরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সাধারণ মানুষ উন্নয়ন দেখেই ভোট দেন। দলের একাধিক প্রার্থী থাকলেও জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন নেতাকর্মীরা তাকে জয়ী করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আলহাজ দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে দেওয়ান মিল্লাদ গাজী, সংরক্ষিত নারী এমপি আমাতুল চৌধুরী কেয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নবীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী ও মেজর (অব.) সুরঞ্জন দাশ। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন তিনি। হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে এবারো দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ এডভোকেট আবদুল মজিদ খান। পুনরায় নির্বাচিত হবার জন্য তিনি দ্রুত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গণসংযোগে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, সাবেক এডিশনাল পিপি চৌধুরী আবুবকর সিদ্দিকী, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ হুমায়ুন কবির রেজা, সাবেক এমপি প্রয়াত এডভোকেট শরিফ উদ্দিনের ছেলে মহেজ উদ্দিন শরিফ রুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিশু পরিবার কল্যাণ সম্পাদক এডভোকেট মাহফুজা বেগম ফাইজা, লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ড. শাহনেওয়াজ, লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার এনামুল হক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুম বিল্লাহ চৌধুরী। এই আসনে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। মাঠে রয়েছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সৌদি আরব পূর্বাঞ্চলের সভাপতি আলহাজ আবু মুুকিত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোট প্রার্থী খেলাফত মজলিসের মহাসচিব সাবেক এমপি আবদুর রব ইউসুফিও এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ) আসনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে জেলা সদরসহ অনেক শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে। দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এডভোকেট আবু জাহিরের অক্লান্ত পরিশ্রমে এলাকার মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগও তাকে তৃতীয়বারের মতো এমপি হিসেবে দেখতে চায়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পিপি আবুল হাসেম মুল্লা মাসুম, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মাহফুজ আলম ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। ওই আসনের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠ দখলে রেখেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদুল রহমান আবদাল। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ্ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আলহাজ জি কে গউছ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক সেলিম দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনে চমক দেখিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাশ উদ্দিন। এ ছাড়া এ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ছিলেন সমাজ কল্যাণমন্ত্রী এডভোকেট প্রয়াত এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মাহবুব আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ মুসলিম, সাবেক পিপি ও চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আকবর হোসেন জিতু ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেত্রী সাবেক নারী এমপি শাম্মি আক্তার সিপা, মাধবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App