×

জাতীয়

হেভিওয়েট মনোনয়নযুদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৪ পিএম

হেভিওয়েট মনোনয়নযুদ্ধ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ কয়েকটি ছোট দলের সমন্বয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নানা কারণেই আলোচনায়। নবগঠিত এই জোটের ছোট ছোট দলে রয়েছেন বড় বড় অনেক নেতা। এই হেভিওয়েট নেতাদের নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। ধানের শীষের মনোনয়ন দিতে গিয়ে ‘কাকে রেখে কাকে ফেলব’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একই নির্বাচনী এলাকায় একাধিক শীর্ষ নেতা প্রার্থী থাকায় আসন বণ্টন নিয়ে হিমশিম নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি-২০ দল-ঐক্যফ্রন্ট কোন প্রক্রিয়ায় সবাইকে খুশি করা যায়, তাই নিয়ে চলছে বৈঠকের পর বৈঠক। ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তখনকার ছাত্রদলের সভাপতি ও ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমান। এরপর ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ ও ৭ম এবং ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদের এমপি হন তিনি। টানা ৪টি সংসদের এমপি হয়েও ২০০৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি আইনি জটিলতায়। আর ২০১৪ সালে তার দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এবার দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন আমান। কিন্তু বাদ সেধেছেন তার এক সময়ের প্রতিপক্ষ আজকের নির্বাচনী মিত্র মোস্তফা মহসিন মন্টু। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক পোড় খাওয়া এই রাজনীতিক এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ নিয়ে লড়তে চান এ আসনে। মন্টু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ায় অনেকটাই বিপদে পড়েছে বিএনপি। বিএনপির কাছে আমানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। দলের এক সময়ের এই সিপাহসালারকে মনোনয়নের বাইরে রাখতে চান না বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব। শ্যাম রাখি না কুল রাখি পরিস্থিতিতে পরেছে মনোনয়ন বোর্ড। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা-২ আসনে কার হাতে উঠবে ধানের শীষ তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। ঐদিন ঢাকা বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে এ আসনে শিকে ছিঁড়ছে কার ভাগ্যে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম-১৪ আসন নিয়ে। এই আসনটিতে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম। এবারো ২০ দলীয় জোটের অংশীদার হিসেবে এ আসনটি দাবি করছে জামায়াত। কিন্তু বাদ সাধছেন ২০ দলীয় জোটের হেভিওয়েট প্রার্থী এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। শরিক তিন দলের তিন হেভিওয়েটকে কীভাবে সামাল দেবে তা নিয়ে সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব মনোনয়ন চান লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে। এখানে ১৯৯৬ সালে আ স ম আবদুর রব বিজয়ী হন। তখন তিনি শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রীও হন। ১৯৮৮ সালেও এ আসেন বিজয়ী হয়ে রব হয়েছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আশরাফ উদ্দিন নিজান ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন। আ স ম রবের কারণে এবার নিজানকে বলির পাঠা বানাতে পারে বিএনপি। চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক মন্ত্রীর এ আসনে এবার বাগড়া দিচ্ছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। জোট ঠিক রাখতে হলে ইবরাহিমকে এ আসনটি ছেড়ে দিতে হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। এ কারণে এখানেও মনোনয়নবঞ্চিত হতে হচ্ছে বিএনপির এই শীর্ষ নেতাকে। টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মনোনয়ন চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এবং ২০০১ সালে নিজের দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি হন তিনি। এ আসনে প্রার্থী হতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন ২০০১ ও ২০০৮ নির্বাচনে ২য় হওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আজম খান। কাদের সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দিলে বঞ্চিত করা হবে আহমেদ আজম খানকে। নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না চাইছেন ঢাকা-১২ ও বগুড়া-২ আসনটি। ঢাকা ১২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। বগুড়া-২ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি হাফিজুর রহমান এবারো মনোনয়ন চান। পাশাপাশি এ আসনে জামায়াতও চায় তাদের প্রার্থী দিতে। তবে শেষ পর্যন্ত এ আসনটি পেয়ে যেতে পারেন মান্নাই। মৌলভীবাজার-২ আসনে ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চান। এখানে বিএনপির মনোনয়ন চান এডভোকেট আবেদ রাজা। ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান। এখানে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতাদের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার মনোনয়ন নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এসব প্রার্থী জাতীয় নেতা হলেও ভোটের মাঠে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এসব দিক বিবেচনায় নিচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকে ভোটযুদ্ধ এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, আমাদের বিজয়ী হতে হবে। তাই মুখ দেখে নয়, বিজয়ী হতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App