×

জাতীয়

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের তাগিদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৪২ এএম

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের তাগিদ
সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক নির্বাচনকেন্দ্রিক সংহিসতার ঘটনাকে দেশের জন্য লজ্জা ও কলঙ্কজনক আখ্যা দিয়ে এ পরিস্থিতির অবসান চান সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা বলেন, এই সহিংসতার দায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর যেমন বর্তায়, তেমনি বিরোধী দলও এর দায় এড়াতে পারে না। নাগরিক সমাজের ব্যক্তিরাও এ দায় এড়িয়ে নিজেদের সভ্য বা দায়িত্বশীল বলে দাবি করতে পারেন না। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার সমস্যা শুধু সংখ্যালঘুদের সমস্যা নয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা। তাই একে অবশ্যই সবাই মিলে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে এর টেকসই সম্মানজনক সমাধান সুনিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। ‘জাতীয় নির্বাচন : সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোটটেবিল আলোচনা সভায় এই বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। আলোচনায় অংশ নেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট তবারক হোসেইন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রমুখ। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান, এডভোকেট বিনয় কুমার ঘোষ, মানবাধিকার সংগঠক আসিফ ইকবাল, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সদস্য সচিব দীপক কুমার রায় বক্তব্য রাখেন। সুলতানা কামাল বলেন, সংখ্যালঘুদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। নির্বাচন যখন চলে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু জনগণের ওপর নির্যাতনের মাত্রাটা অনেক বেশি বেড়ে যায়। সেটার একটা সাংঘাতিক রকমের প্রকট রূপ আমরা দেখতে পাই। প্রশাসন এবং পুলিশ যদি নিরপেক্ষ না হয়, প্রতিটি মানুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে এ কাজগুলো সমাধা করার চেষ্টা না করে, তাহলে আমরা আশা করতে পারি না যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের ভোটের অধিকারটা নিরাপদভাবে, সহজভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। তিনি বলেন, ব্লসফেমি আইন এ দেশে না থাকলেও ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত হানার অজুহাতসহ বিভিন্ন অজুহাতে রাষ্ট্র ব্লসফেমি আইনের চর্চা করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেখানে শূন্য সহনশীল হওয়ার কথা সাম্প্রদায়িক হামলাকারী, নারী নির্যাতনকারী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের প্রতি আজ তার বিপরীতে রাষ্ট্রের শূন্য সহনশীল অবস্থান হয়ে গেছে মুক্তিবুদ্ধির প্রতি। এ অবস্থায় দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা যে করুণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুরা ইচ্ছায় দেশ ত্যাগ করে না। রাষ্ট্র এবং রাজনীতি তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বলেই তারা দেশ ত্যাগ করে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা করে দেশকে সংখ্যালঘু শূন্য করলে এর জন্য বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আমরা সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো সহিংসতা দেখতে চাই না। বিভিন্ন সময় নির্বাচনকালীন সহিংস ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাবা, আমার মেয়েটা ছোট। তোমরা সবাই একসঙ্গে এসো না। একজন একজন করে এসো...’ মায়ের এমন আর্তি শুনতে চাই না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতনের ক্ষেত্রে রক্ষক ও ত্রাতার ভ‚মিকার বদলে রাষ্ট্র নিজেই নিপীড়ক কিংবা পৃষ্ঠপোষকের ভ‚মিকা পালন করেছে উল্লেখ করে পঙ্কজ ভট্টচার্য বলেন, যেভাবে বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির উদাহরণ তৈরি করা হচ্ছে তাতে অভয়নগর, নাসিরনগর, ঠাকুরপাড়া, কর্ণাইয়ের মতো হামলা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সংবিধানকে ধর্মীয় মোড়কে আবদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা বিজাতীয় ও বিরাষ্ট্রীয়করণের শিকার হচ্ছে। খুশী কবীর বলেন, মার্কা বা দল নয় প্রার্থীকে দেখে ভোট দেয়ার সময় এসেছে। যে প্রার্থী সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন করেছে তাদের বয়কট করতে হবে। ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগ আর ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগ এক নয়। যদি তারা নিজেদের সেই দাবি করেন তাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের সেই প্রমাণ দিতে হবে। সংখ্যালঘুরা আমাদের দেশের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। অথচ ধর্মীয় ও জাতিগত কারণে তাদের উপেক্ষা ও নির্যাতন করা হচ্ছে। শ্যামল দত্ত বলেন, এ দেশে গাছের জন্য, নদীর পানি দূষণের জন্য কাঁদার লোক আছে। কিন্তু গুটিকয়েক সচেতন মানুষ ছাড়া সংখ্যালঘুদের জন্য কাঁদার লোক নেই। সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন, প্রয়োজনে সংখ্যালঘুদের আলাদা দল করারও সুপারিশ করেন তিনি। খালেকুজ্জামান শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ধর্ম শিক্ষার নামে এ দেশে প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীদের বিচ্যুত করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App