×

জাতীয়

দল গোছাতে পারেনি আ.লীগ, কোন্দলে বিভক্ত বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৪১ পিএম

দল গোছাতে পারেনি আ.লীগ, কোন্দলে বিভক্ত বিএনপি
গৃহবিবাদ, দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে চরম কোন্দলে জর্জরিত লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন কমিটির সম্মেলন না হওয়া, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করেছে দুদলেই। যার প্রভাবে উপজেলা ও পৌরসভা থেকে শুরু তৃণমূল পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছেন নেতাকর্মীরা। জেলার সব কটি উপজেলায় গ্রুপিং বা বিরোধ রয়েছে। এসব বিরোধ কখনো সরব কখনো নীরব। এক সময়ের জামায়াত-বিএনপির দুর্গ লক্ষ্মীপুরে এখন বিএনপিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু ও সভাপতি আবুল খায়ের ভ‚ঁইয়া গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। দুই গ্রুপই নিজ নিজ বাসায় সভা করে দলীয় কৌশল নির্ধারণ করে। দলের শৃঙ্খলা বিনষ্টের অভিযোগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাবুকে সতর্কীকরণ নোটিসও দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রুপিংয়ে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। কেন্দ্রের নির্দেশের পরও গত নয় বছরে জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়নি। অঙ্গসংগঠনগুলোর একই অবস্থা। তবে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেছেন, অভ্যন্তরীণ এ গ্রুপিং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। মনোনয়ন চূড়ান্তের পর দল ঐক্য হয়ে যাবে। প্রশাসনের বাধা এবং মামলা-হামলার ভয়ে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ না করলেও শরিক দল এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আগামী নির্বাচনে জেলার চারটি আসনেই বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। অপরদিকে একটানা প্রায় ১০ বছর সরকারে থেকেও সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দল নয়, নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। দলের নেই কোনো নিজস্ব কার্যালয়। বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় বিএনপি-জামায়াত। এর পরও সাংগঠনিক শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায় মনোযোগ নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের। উল্টো অভিযোগ রয়েছে অনেক নেতা বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যৌথ ব্যবসাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। তাদের অভিযোগ জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একচ্ছত্র নায়কত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক সভা না করেই দুজনের সিদ্ধান্তে চলছে দলের কর্মকাণ্ড। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বাছাইয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করে আওয়ামী রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা জানান, গত ১৫ বছরেও লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। এরই মধ্যে পদ নিয়ে পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন ইন্তেকাল করেছেন। ২০০৩ সালে পৌর কমিটির সম্মেলন হয়েছিল। একই অবস্থা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের। এই কমিটির সভাপতি এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। জেলা সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। নিজ সংসদীয় এলাকায় নিজের মতো গণসংযোগে ব্যস্ত তিনি। জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন। তিনিও একইভাবে জনসংযোগ করছেন। কারো সঙ্গে কারো সমন্বয় নেই। জেলার রায়পুর উপজেলাতেও গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। ৩ বছর আগে মারা যান কমিটির সভাপতি স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী দুলাল। রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের নাজুক অবস্থা। ৭ বছর ধরে নামসর্বস্ব একটি আহবায়ক কমিটি রয়েছে এখানে। রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টুর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দলীয় ১০ ইউপি চেয়ারম্যান ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দ্ব›দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। সফিক মাহমুদ পিন্টু কেন্দ্রীয় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ভগ্নিপতি হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ থাকতে পারে বলে একাধিক নেতাকর্মী মনে করেন। বিএনপি জামায়াত সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা, সভাপতির সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব বন্ধ না হলে লক্ষ্মীপুরের এ আসনটি হারাতে পারে আওয়ামী লীগ। সূত্র জানায়, দীর্ঘ একযুগ পর গত বছর রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নাটকীয়ভাবে সফিক মাহমুদ পিন্টুকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। তিনি সভাপতি হওয়ার পরপরই বিএনপি তাদের অঙ্গসংগঠনের সব কমিটি সম্পন্ন করে উপজেলাব্যাপী ফেস্টুন ব্যানার বিলবোর্ড দিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে গতি ফিরে আসে। আর তিনি ঢাকায় বসবাস করে নেতাকর্মীদের খোঁজখবর না নিয়ে দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করেছেন। এরপর থেকে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলীয় ১০ ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার দ্ব›দ্ব প্রকাশে রূপ নেয়। নেতাকর্মীরা সভাপতির মিটিং মিছিল বয়কটসহ সভা সমাবেশে উপস্থিতিতে বাধা প্রদান করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র বেলাল আহম্মেদ জানান, সভাপতির ন্যক্কারজনক একক সিদ্ধান্তগুলোই রামগঞ্জব্যাপী আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নেতৃত্ব ও ভাগবাটোয়ারার হিসেব নিয়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রমেও নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় কোনো প্রভাবশালী নেতার আগমন ঘটলে বিশেষ ব্যবস্থায় লোকজন উপস্থিত করানো হয়। সরকারের সফলতা আর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তৃণমূলের সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরে তাদের প্রভাবিত করার কোনো উদ্যোগ নেই। ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরসহ সভাপতি পদে ৬ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কোনো ভোটাভোটি না করেই কেন্দ্রীয় নেতারা গোলাম ফারুক পিংকুকে সভাপতি ও এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এর প্রভাবে ভেতরে ভেতরে স্নায়ু যুদ্ধ চলে আসছে। দলের সব অঙ্গ সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণে নেই জেলা আওয়ামী লীগের। যুবলীগের একক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছেন পৌর মেয়র আবু তাহেরের ছেলে ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু। তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের মূল নিয়ন্ত্রণ ও পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এমপি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নিয়ন্ত্রণে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। মহিলা আওয়ামী লীগ নিয়ে আছেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন লিকা। এদিকে জেলার রাজনীতিতে জামায়াত-শিবির উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। তারা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ না করলেও গোপনে নিজেরদের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App