×

জাতীয়

প্রজ্ঞাপন দিয়েই খালাস ইসি : পোস্টারে সয়লাব দেশ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০১:১৯ পিএম

প্রজ্ঞাপন দিয়েই খালাস ইসি : পোস্টারে সয়লাব দেশ!
জাতীয় নির্বাচেন প্রায় দেড়মাস বাকি। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের পোস্টার-ফেস্টুনে সয়লাব রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই দেশের প্রায় সর্বত্র হাজার প্রার্থীর সমর্থনে টাঙানো হয়েছে এসব সুদৃশ্য রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। কোথাও দলীয় প্রতীক এবং দলীয় প্রধানের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থী, কোথাও দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের ছবিসহ শুভেচ্ছাবাণী, কোথাও সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহবানের ছবি ও পোস্টার শোভা পাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এসব ছবি অপসারণ করার কথা ছিল। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। কিন্তু প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি ইসি। নিজস্ব লোকবল না থাকায় তাদের নির্ভর করতে হয় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রশাসনের ওপর। সে কারণে সব সময় ‘কুইক অ্যাকশনে’ যাওয়া সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছে কমিশন। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সর্বত্রই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও দেয়াল লিখন করে রেখেছেন। বিশেষ করে সাভার অর্থাৎ ঢাকা-১৯ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মুরাদ জং এবং তার অনুসারীরা কয়েক হাজার পোস্টার ও ব্যানার দিয়ে পুরো এলাকা ঢেকে ফেলেছেন। তার তুলনায় বর্তমান এমপি ড. এনামুর রহমান সামান্য পিছিয়ে থাকলেও তার প্রচারণা সামগ্রী কোনো অংশে কম নয়। এ আসনে আরো বেশ কয়েক জন প্রার্থী প্রচারণায় অংশ নিয়ে রাস্তাঘাটে সর্বত্র নিজ প্রচারণা সামগ্রী সেঁটে দিয়েছেন সর্বত্র। এদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট বা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচারণা। এ বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী মুরাদ জং বলেন, আমি এ আসনের প্রার্থী হচ্ছি। দলীয় নেত্রী আমাকে গ্রিন সিগনাল দিয়েছেন। তবে প্রচার সামগ্রী আমি তো নিজে করি না, আমার অনেক শুভাকাক্সক্ষী আছে যারা আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে বিভিন্ন স্থানে প্রচার সামগ্রী টাঙিয়ে দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে আগামীকালের মধ্যে এসব সরিয়ে ফেলার জন্য, আমি সবাইকে বলেছি তারা যেন নিজ উদ্যোগে এসব সরিয়ে ফেলেন। সরানোর কাজ চলছে। বহু পোস্টার-ব্যানার, তাই সময় লাগছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানান তিনি। আবার এ আসনের বর্তমান এমপি ডা. এনামুর রহমান বলেন, তাকে যারা ভালোবাসে, যারা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে তারাই আমাকে আবারো প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় বলে প্রাচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে এসব টাঙিয়েছে। তবে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণা নিষেধ করেছেন ইসি। আমি এটা মেনে সবাইকে নিজ দায়িত্বে প্রাচারণা সামগ্রী সরানোর নির্দেশনা দিয়েছি। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের প্রায় সব কটি সংসদীয় আসনের প্রায় একই চিত্র। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের প্রায় সব শহরেও পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব বলে জানিয়েছেন আমাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা। তবে এ প্রাচারণায় বিএনপি বা অন্য যে কোনো দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে বলে জানা গেছে। আইন অনুসারে, প্রতীক বরাদ্দের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের এ ধরনের প্রচারণা নির্বাচনী বিধিমালা ৯১ (বি) ধারামতে, নিয়ম ভঙ্গের শামিল এবং অপরাধ। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জান। গত ১১ নভেম্বর ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব প্রচারণা সামগ্রী সরানোর শেষ দিন ছিল ১৪ নভেম্বর। কিন্তু পরে পুনঃতফসিল ঘোষণার পরে ২৩ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর পিছিয়ে যাওয়ার পরে এ-সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, প্রচারণা সামগ্রী সরানোর শেষ দিন আগামীকাল। নিয়মানুসারে ইসি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব সম্ভাব্য প্রার্থীদের তাদের নিজ নিজ প্রচারণা সামগ্রী সরানোর অনুরোধ জানায়। ইতোমধ্যে গত ৩ দিন ধরে চলা নির্বাচন কাজে রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে ইসি সব কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জোরদার তৎপরতা চালানো এবং এসব প্রচারণা সামগ্রী আগামীকালের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে। যদি কোনো প্রার্থী তা নিজ উদ্যোগে না সরিয়ে ফেলে তাহলে নির্বাহী ম্যাজিট্রেটকে মাঠে নামানো হয়েছে, তারা উক্ত প্রার্থীকে জরিমানা, প্রয়োজনে শাস্তি দিতে দ্বিধা না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে, এটা ফিক্সড। দেশের অনেক জায়গায় এখনো ব্যানার, পোস্টার নামানো হয়নি। আগামীকালের মধ্যে যাতে এগুলো নামিয়ে ফেলা হয় এবং মনোনয়নপ্রাপ্তরা যাতে ব্যানার-পোস্টার লাগানোর সুযোগ পান সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জানান, অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী মাইলের পর মাইল রাস্তা, শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দেয়ালে নিজ প্রচারণার চিত্র এঁকেছেন। কিন্তু এদের অনেকেই হয়তো চ‚ড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাবেন না। তা ছাড়া নির্বাচনী বিধিমালা অনুসারে, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনোভাবেই প্রচার করা যাবে না। তাই যদি তারা আগামীকালের মধ্যে নিজ দায়িত্বে এসব ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার বা দেয়াল লিখন সরিয়ে বা মুছে না দেন তাহলে রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিজে বা ক্ষেত্র বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের সহায়তায় এসব সরিয়ে ফেলবেন এবং সংশ্লিষ্টদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App