×

বিনোদন

অজানা এক বঙ্গবন্ধুকন্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০১:২৫ পিএম

অজানা এক বঙ্গবন্ধুকন্যা
সবকিছু হারিয়ে অসহায় এক নারী কী করে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন অনন্য উচ্চতায় তা ভাবলে সত্যিই হতবাক হতে হয়। যা এতদিন আমাদের কাছে ছিল অজানা-অকল্পনীয়; তা-ই আজ জানলাম বঙ্গবন্ধুকন্যার জীবনভিত্তিক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। আমরা যেমন মুগ্ধ তেমনি বিস্মিতও। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে মধুমিতা হল থেকে বেরিয়েই এমন মন্তব্য রাজধানীর উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আনিকার। ওরা সাত সহপাঠী মিলে দেখতে এসেছিলেন সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি। আনিকার সঙ্গে থাকা নাফিয়া, শাওন, শ্রাবণী, স্বর্ণালী, রামিশা, জান্নাতি এবং পাপিয়ারও যেন ঘোর কাটছিল না। তারা আরো বললেন, যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় তার আগের রাতে বিদেশের মাটিতে বসে ক্যান্ডেল ডিনার পার্টি করছিলেন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ খবর তাদের বাকরুদ্ধ করেছিল। আজও টেলিফোনের রিং কিংবা মোবাইলের রিং টোন শুনলেই বঙ্গবন্ধুকন্যার ভেতরটা কেঁপে ওঠে। সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ছবিটি দেখে আনিকারা এই প্রথম জানতে পারলেন, ভারতে আশ্রয় নেয়ার সময় নিরাপত্তার জন্য দুই বোনই তাদের নাম পরিবর্তন করেছিলেন। এমনকি জীবনের শঙ্কা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে পারলেও দুই বোনকে সেসময় নিজ বাড়িতে উঠতে দেয়া হয়নি। পরিবারের নিহত সদস্যদের জন্য নিজ বাড়িতে মিলাদও করতে পারেননি। রাস্তায় করতে হয়েছিল মিলাদের আয়োজন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনের অজানা এসব বিষয়ের কথা বলতে বলতে চোখ ভিজে ওঠে আনিকাদের। এমনই অনুভ‚তি আগারগাঁও থেকে আসা চাকরিজীবী মাহবুবেরও। কয়েকদিন আগে তার চোখে পড়েছিল প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পোস্টার। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কী ঘটেছিল তার দুই কন্যার জীবনে তা দেখা আর জানার জন্যই এসেছিলেন। তিনি যেন নতুন এক শেখ হাসিনাকে আবিষ্কার করলেন। আবেগাপ্লুত মাহবুব ভোরের কাগজকে বললেন, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবন যেন সত্যি এক সিনেমা যার পুরোটাই অবিশ্বাস্য, নির্মম। এমন চলচ্চিত্র সবার জন্য শিক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের শুভাকাক্সক্ষী ডা. পিসি রায় স্বাধীনতার আগে একাধিক বার ছবি দেখতে এসেছিলেন মধুমিতায়। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর গতকাল আবার এ হলে এসেছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনের অজানা কথা জানার আগ্রহে। একই রকম কৌত‚হল নিয়ে মধুমিতায় এসেছিলেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটক, স›দ্বীপ বিশ্বাস ও অন্তু আজাদ। তবে তাদের দৃষ্টিটা অন্য জায়গায়। ছবির বিষয় আর দৃশ্যায়ন নিয়েই বেশ কৌত‚হল। তিন নির্মাতাই জানালেন, ‘হাসিনা : অ্যা ডটারস টেল’ অনন্য এক ছবি। অনন্য এর নির্মাণ ভাবনা। সেই সঙ্গে বিষয়টাও অভিনব। স›দ্বীপ বিশ্বাস জানালেন, গতানুগতিক রাজনীতি ভাবনার বাইরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনের ঘটনা তুলে আনা হয়েছে। নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে সিনেমাটিক উপস্থাপনার বিষয়টা অনন্য। ছবিটির সর্বজনীনও আছে। রেজা ঘটক বললেন, দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য আবেদন সৃষ্টির মতো নির্মাণশৈলী আছে ছবিতে। শুধু মধুমিতাতেই নয়, স্টার সিনেপ্লেক্সেও ভিড় জমিয়েছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকা ও কুশীলবরা। সকাল ১১টায় ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রামাণ্যচিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনীতে এসেছিলেন অভিনেত্রী শমী কায়সার, চিত্রনায়ক শাকিব খান, নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও ছিলেন দর্শক সারিতে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যারা এখানে জীবনের গল্প বলেছেন, সংগ্রামের গল্প বলেছেন। দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহসী গল্পও বলা হয়েছে। ছবিটা শুধু দুজন মানুষের গল্প নয়, এটা আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে তরুণ প্রজন্ম নতুনভাবে নিজের দেশ ও বঙ্গবন্ধুকে জানবে বলে মনে করেন শমী কায়সার। চিত্রনায়ক শাকিব খান বলেন, এক কথায় অসাধারণ কাজ। এমন নির্মাণ আরো হওয়া উচিত। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি; তখন তো আমাদের জন্মই হয়নি। আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে এই প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। অনেক ইতিহাস উঠে এসেছে। সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা, হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের সংকটকাল ও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসার কাহিনি তুলে আনা হয়েছে বিশদভাবে। রাজনৈতিক আদর্শের বাইরে শেখ হাসিনার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়া থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে কাটানো দিনলিপিও উঠে এসেছে প্রামাণ্যচিত্রে। এতে অকপট সরলতায় স্মৃতিচারণ করেছেন দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরায় স্টার সিনেপেক্সে প্রিমিয়ার শোর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির। গতকাল ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের বøকবাস্টার, মতিঝিলের মধুমিতা ও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। প্রথম দিনেই ব্যাপক কৌত‚হল দেখা গেছে দর্শকদের। তারা বলছেন, অজানা এক বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখা গেছে প্রামাণ চলচ্চিত্রটিতে। যা ছিল অনেকের কাছেই বাকরুদ্ধকর, নির্মমতায় ভরা। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও অ্যাপেলবক্স ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। চিত্রগ্রহণ করেছেন সাদিক আহমেদ। নির্মাণ ভাবনায় ছিলেন রেজাউর রহমান খান পিপলু। ৭০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাধারণ জীবনের অসাধারণ কিছু মুহূর্ত আছে। যেসব মুহূর্তে তাকে পাওয়া যায় কখনো কন্যা, বোন, মা; কখনো জননেত্রী হিসেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App