×

পুরনো খবর

আ.লীগ-বিএনপি ভোটযুদ্ধ জয়ে ফিরতে চায় জাপাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:২৯ পিএম

আ.লীগ-বিএনপি ভোটযুদ্ধ জয়ে ফিরতে চায় জাপাও
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গাজীপুর-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে বেশ জোরেশোরে। তবে এদের মধ্যে দুয়েক জনের পোস্টার-ব্যানার দেখা গেলেও মূলত স্থানীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বেশি সরব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পক্ষের লোকজন। তারা নানা গুণকীর্তন সংবলিত স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের সমর্থন আদায়ে প্রার্থীরাও নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে এলাকায় দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি এসব প্রার্থী দলের হাইকমান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। তবে আওয়ামী লীগ কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী যিনিই হন গত ৫ বারের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে এ আসনে ৪ বারের বিজয়ী বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। জয়ের ধারায় ফিরতে চায় আসনটিতে একবার জয়লাভ করা জাতীয় পার্টিও। তবে কার্যত এ আসনে ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই। কালীগঞ্জ পৌরসভা, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ এই ৪টি ওয়ার্ড ও গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি আবারো প্রার্থী হতে চান। তিনি ২০০৮ সালে নবম ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সরাসরি এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার সংরক্ষিত নারী আসনে মহিলা এমপি ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাজেদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মেহের আফরোজ চুমকি নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। তার প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মসলিন কটন মিলস হা-মীম প্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে পোশাক শিল্প কারখানার মাধ্যমে স্থানীয় হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজেরও। প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, তার বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিন এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি শহীদ হন। বাবার আদর্শ ধারণ করে তিনি এলাকা ও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। নারী ও যুব সমাজের ক্ষমতায়নে কাজ করছেন। আধুনিক ও উন্নত কালীগঞ্জ গড়তে সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শিল্প কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থানে ভ‚মিকা পালন করছেন। অবহেলিত কালীগঞ্জে এখন একের পর এক স্থাপিত হচ্ছে শিল্প কারখানা। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। বিগত দিনের মতো এ আসনটি ধরে রাখতে স্থানীয়ভাবে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে পাড়ায় মহল্লায় উঠান বৈঠক করছেন এবং তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তিনি। তাই আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী তাকেই মনোনয়ন দেবেন। এ ছাড়া ডাকসুর দুইবারের সাবেক জিএস, একবারের ভিপি ও সাবেক সাংসদ এবং বর্তমানে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আখতারউজ্জামানও মনোনয়ন চাইবেন এ আসনে। তিনি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আখতারউজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে সৎ ও জনপ্রিয়তা দেখে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তাই সাধারণ মানুষ আসন্ন নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশাবাদী। এ আসনে বাংলার মিয়া ভাই হিসেবে খ্যাত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। ফারুক বলেন, ৪০০ বছর ধরে এই এলাকায় আমার বাপ-দাদারা বসবাস করে আসছেন। তাই সবার আগে এখানে নির্বাচন করার অধিকার আমারই রয়েছে। বঙ্গবন্ধু এ এলাকায় এসেছিলেন বলে আমার বাবা ‘বঙ্গবন্ধু’ বাজার নামে একটি বাজারের নামকরণ করে গেছেন। যেখানে ৫৭ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে আসছি, সেখানে নতুন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কিছু নেই। এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে চেনেন। তাই নেত্রী যদি মনে করেন আমাকে এখানে মনোনয়ন দেবেন, তাহলে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দলের জন্য কাজ করব। বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রদল নেতা, সাবেক সাংসদ, দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলনের নামই নেতাকর্মীদের মুখে মুখে রয়েছে। তিনি ২০০১ ও ২০০৬ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক এই সাংসদ নিজের মতো করেই এলাকা গোছাচ্ছেন। এ আসনে উভয় জোটেই হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, ফজলুল হক মিলন আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফজলুল হক মিলন বলেন, বিএনপি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। বর্তমানে তারা দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলন করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসনটি পুনরায় উদ্ধারের সব প্রস্তুতি তার রয়েছে। তবে বিএনপি থেকে এ আসনে আরো দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে কর্মী-সমর্থকদের কাছে। একজন হলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মনির হোসেন, অন্য জন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি আহমেদ সাইমুম। আহমেদ সাইমুম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে আছি এবং কাজ করছি। এখন দল যদি মনে করে আমাকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেবে তবে আমি প্রস্তুত। আবার আমাকে না দিয়ে দলের প্রয়োজনে সিনিয়র কাউকে দিলেও আমি দলের হয়ে তার পক্ষে কাজ করতে প্রস্তুত। মনির হোসেন বলেন, আসলে বিএনপির তৃণমূলের প্রত্যাশা আমি এ আসনে নির্বাচন করি। তৃণমূলের প্রত্যাশা পূরণ করতে এ আসনে আমিও নির্বাচন করতে মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল বিবেচনা করবে। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান এ আসনে পার্টি থেকে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আবার জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ বলছেন জাপা নেতা আজম খান গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) অথবা নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়বেন। সেক্ষেত্রে এ আসনে আজম খানের স্ত্রী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এসোসিয়েশনের সহসভাপতি রাহেলা পারভীন খান শিশির এ আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়বেন। অন্যদিকে জাপা (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারা বেগমের নামও শোনা যাচ্ছে। আনোয়ারা বেগম এ আসনে ১৯৮৬ সালে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াত-শিবিরের কোনো কার্যক্রম না থাকলেও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, গাজীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. খাইরুল হাসান এ আসনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের হয়ে লড়বেন বলে ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির আহবায়ক এডভোকেট আতিকুর রহমান ভ‚ঁইয়া এ আসনে দলটির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে অতি সম্প্রতি উপজেলার আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে এক জনসভায় দলটির আমির চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করিম ঘোষণা দিয়ে গেছেন। একই আসনে জাকের পার্টি বাংলাদেশের প্রার্থী হতে চান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক, ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম মহাসচিব, গাজীপুর মহানগর ও জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট এ এন এম মনিরুজ্জামান লাল মিয়া, ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির সহসভাপতি এ বি এম জিয়াউর রহমার ওরফে ফেলু হাজি। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপির বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজউদ্দিন আহমেদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App