×

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের ফেরা আজ থেকে শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩৬ পিএম

জাতিসংঘের বিরোধিতার তোয়াক্কা না করে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে একে ‘অপরিপক্ব’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছে। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। গত মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৫ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হবে। মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমের প্রথম দলটির প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে এদের সবাইকে একসঙ্গে নেয়া হবে না। ১৫০ জন করে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ না। এর কারণ হচ্ছে, মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার এই বিবৃতির প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সমর্থন জানিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা দু’দেশের সরকারকেই আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তারা একে অপরিপক্ব পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে যাদের নিয়ে আয়োজন, সেই রোহিঙ্গারাও এই অবস্থায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাচ্ছে না। টেকনাফে আশ্রয় নেয়া ২০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, যেখান থেকে তারা পালিয়ে এসেছে সেখানে আর ফিরে যাবে না। কারণ ফিরে গেলে আবারো তাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হতে পারে। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা দেয়া হলে ফিরে যেতে চান তারা। নয়াপাড়াস্থ শালবনের ডি নাইন ব্লকের রোহিঙ্গা রশিদ আহমেদের ছেলে মৌলভী মো. আয়ুব বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্বাস করি। আমরা রোহিঙ্গা, বাঙালি না। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া হলে আমরা স্বেচ্ছায় চলে যাব। অপর কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, অধিকার দেয়া হলে তারাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। এই অধিকারের মধ্যে নিজেদের ভিটামাটি ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে অন্যতম। এ ছাড়া, নাগরিকত্ব প্রদান, রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি ও হত্যা নির্যাতন বন্ধ করাও অন্যতম অধিকার। গত রবিবার এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, যেতে না চাইলে কাউকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না। যারা ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবে, শুধু তাদেরই মিয়ানমারে পাঠানো হবে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য আবুল কালাম জানান, বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩০টি পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। রোহিঙ্গাদের আমরা ঘুমধুমের ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাব। সেখান থেকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে। ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলবে। উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App