×

জাতীয়

আচরণবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৫৪ এএম

আচরণবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ
আচরণবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইচ্ছেমতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনাকে কেন্দ্র করে চলছে শোডাউন। বাড়ছে রাজনৈতিক সংঘাত। সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। আর এসব বিষয়ে অনেকটা নীরব ভ‚মিকা পালন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধি-২০০৮ এর ৮ নং বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসি শুরু থেকেই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে গত ৯ নভেম্বর আদাবরে দুজন নিহত হওয়া কিংবা গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুুলিশের সংঘর্ষের মতো ঘটনাগুলো এড়ানো সম্ভব হতো। গত সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এর পরে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী, মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ সবগুলো বড় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা শোডাউন করে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। গত ৯ নভেম্বর আদাবরে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর শোডাউনের সংঘর্ষে ২ জন সমর্থকের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরের দিন ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ ছিল না। এ বিষয়ে ইসির বক্তব্য এটি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বলে তারা বাধা দেয়নি। আবার মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য গত শনিবার থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মোটরসাইকেল, মোটরযানে ব্যান্ড পার্টিসহ শোডাউনে হাজারো মানুষের উপস্থিতির কারণে যানজটে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। এতে মহাসমস্যায় পড়েন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পরীক্ষার্থী, অসুস্থ রোগীসহ নানা কারণে বাইরে বের হওয়া মানুষজন। এ ব্যাপারেও নীরব ছিল ইসি। অবশ্য করণীয় বিষয়েও দ্বিধান্বিত ছিল সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। এদিকে বিএনপি ভোটে আসার ঘোষণা দেয়ার পর গত সোমবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। আর সেদিন থেকেই নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় বিএনপির কর্মী সমর্থকদের ব্যাপক ভিড় তৈরি হয়। তারা রাস্তায় অবস্থান নেয়ায় ব্যাহত হয় যান চলাচল। দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। সর্বশেষ গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে উত্তেজিত বিএনপির কর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। হতাহত হয় অনেকে। এর আগে আওয়ামী লীগের ফরম বিক্রির সময়ও ধানমন্ডি এলাকায় ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। এই ধরনের শোডাউন নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এদিকে গত মঙ্গলবার ইসির পক্ষ থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয় ‘মনোনয়ন নেয়া এবং জমা দেয়ার সময় কোনো ধরনের শোডাউন করা নির্বাচনী আচরণ বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন’। আদেশে বলা হয় তফসিল ঘোষণার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা জমা নেয়ার সময় মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন সহকারে মিছিল ও শোডাউন করা হচ্ছে যা সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধি-২০০৮ এর ৮নং বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনাও দেয় ইসি। তবে এটি আইনের লঙ্ঘন কিনা তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনও দ্বিধাবিভক্ত। গত মঙ্গলবার এ নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও ওইদিন সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম কিনতে আসায় যে ভিড় হচ্ছে এটা আচরণ বিধি লঙ্ঘন নয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে না। কারণ সারা বাংলাদেশে প্রতি আসনে তিন জন করে যদি নমিনেশন নিতে আসে তাহলে ৯০০ জন হয়। আর তাদের সঙ্গে যদি দুজন করে আসে তাহলে ১ হাজার ৮০০ জন হয়। তাহলে নয়শত ও ১ হাজার ৮০০ মিলে হয় ২ হাজার ৭০০। ‘ধরি, এই তিন হাজার লোক এই কার্যালয়ের সামনে থাকবে। এটা তো আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়। আর এটাকে যদি আপনারা লিখেন আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, তাতে নিজের প্রতি অন্যায় করবেন, নিজের বাস্তবতার প্রতি অন্যায় করবেন, মানুষের প্রতি অন্যায় করবেন, দলের প্রতি অন্যায় করবেন। এদিকে কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী তাদের টাঙানো ব্যানার বা ফেস্টুন, দেয়াল লিখন সরিয়ে বা মুছে ফেলেনি। বরং প্রতিদিন প্রার্থীদের সমর্থনে আরো বেশি ব্যানার ফেস্টুন টাঙাতেও দেখা গেছে। এ বিষয়ে গত দুদিন ধরে চলা রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসি সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্পষ্টভাবে তাদের এসব সরিয়ে ফেলা এবং নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য ম্যাজিস্ট্র্রেট মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে এসব বিষয়ে নিরব দর্শকের আসনে ইসি। ইসির কোনো কোনো কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দলীয় কার্যালয় থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন সংগ্রহের সময় যে শোডাউন তা কি ইসির আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে কিনা তা নিয়ে ইসিতে দ্বিমত রয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিবও স্পষ্ট নন। এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়নফর্ম কিনতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে তাতে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহের সময় আরো বেশি শোডাউন হলেও পুলিশ তাতে বাঁধা না দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এদিকে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসিকে এখন সব ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তারা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের শোডাউন বন্ধ বা ব্যানার ফেস্টুন না সরিয়ে যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এমনকি তাদের প্রার্থিতা বাতিল বা জরিমানাও করতে পারে ইসি। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে ইসিকে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার পূর্ণ ও কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App