×

জাতীয়

‘অনেকেই ফরম নিচ্ছে আপনিও নিয়ে যান’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩১ পিএম

‘অনেকেই ফরম নিচ্ছে আপনিও নিয়ে যান’
‘... এই যে ভাই, নোমিনেশন ফরম নিয়েছেন? অনেকেই তো ফরম নিচ্ছেন, আপনিও একটা নিয়ে নেন।’ চট্টগ্রামের হাটে-মাঠে-ঘাটে, চায়ের দোকানে, আড্ডায় সর্বত্র এখন এমনটিই চলছে। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের জন্য এখন পর্যন্ত বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচশ জন। সবাই যেন এমপি হতে চান। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের জন্য ২২৫ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিনশর বেশি নেতাকর্মী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে সবাই যে এমপি হতে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন তা কিন্তু নয়, কেউ কেউ হয়েছেন প্রভাবশালী প্রার্থীদের পক্ষে গোপনে ডামি প্রার্থী, অনেকে পত্র-পত্রিকায় নাম প্রকাশের জন্য। আবার কেউ এলাকায় পরিচিতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যেও এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে এই রেকর্ড পরিমাণ মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিষয়টিকে অনেকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মন্তব্য করেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউ কেউ এসব ডামি প্রার্থীদের দিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে কৌশলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অশুভ প্রতিযোগিতা নিজ দলের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্যও এটি ক্ষতিকর বলে রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কিছু ব্যক্তির নিজ নির্বাচনী এলাকায় কোনো অবস্থান না থাকলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে তারা ভিড় জমাচ্ছেন। সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-এমপি, ব্যবসায়ী, সাবেক সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, আমলা, আলেম-ওলামা, সাংবাদিক, শিক্ষক সবাই এমপি হতে চান। কোনো রাজনৈতিক অতীত নেই, এলাকায় জনসম্পৃক্ততা নেই, নেই কোনো জনপ্রিয়তা এমন ব্যক্তিরাও এমপি হতে চান। মাঠের রাজনীতিতে তাদের ভ‚মিকা থাক বা না থাক, তাতে যেন তাদের কিছু আসে যায় না, প্রচারই যেন মুখ্য। তারা দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে না গিয়ে ছুটছেন কেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় নেতাদের তুষ্ট করতে, লবিং-তদবির করতে ব্যস্ত। সাংগঠনিক কাজের খবর নেই কিন্তু ছুটছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রচারের আশাই। ভুঁইফোঁড় এমন এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উৎপাতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ। এর আগে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে নেতা-নেত্রী এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি দিয়ে ‘অমুককে এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ সংবলিত রঙিন পোস্টারে দিয়ে সর্বত্র সয়লাব হয়ে যায়। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সেগুলো অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। আর এ জন্য বাড়তি ব্যয় হচ্ছে সরকারের। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৗশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, এই প্রক্রিয়াটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এই অশুভ প্রতিযোগিতা দলের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। দলের মূল প্রার্থী যিনি হবেন, তার জন্য শুভ হবে না। যারা নোমিনেশন পাবেন না, তারা সাবোটাজও করতে পারেন। এমপি হওয়ার জন্য একের বেশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি হাস্যকর পর্যায়ে চলে গেছে মন্তব্য করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার বলেন, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, পরিচিতি নেই এমন অনেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলের প্রাথমিক সদস্য নন এমন অনেকেও ফরম সংগ্রহ করছেন, যা রীতিমতো হাস্যকর। মনোনয়নপত্র নেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। মনোনয়ন প্রত্যাশী কারা হতে পারবেন, দলের সঙ্গে কতদিন সম্পৃক্ত বা পদ-পদবিতে আছেন কিনা তা যাচাই করে মনোনয়ন ফরম দিলে ভালো হতো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App