×

পুরনো খবর

জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:০৮ পিএম

জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ
আকাশপথে ঢাকা ও রংপুর বিভাগের ‘প্রবেশ দ্বার’ বলে খ্যাত নীলফামারী জেলার মর্যাদাপূর্ণ নীলফামারী-৪ আসনটি স্থানীয় রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ফলে এ আসনটি দখলে রাখতে উন্মুখ থাকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষ নেতৃত্ব। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আবেগ বিরাজ করছে আসনটির দখল রাখা নিয়ে। একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ উপজেলা) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচনী তোড়জোড় জোরেশোরে শুরু হয়ে গেছে। এত দিন যারা পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ডের মধ্যে প্রচারণায় ছিলেন তারা এখন নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়ে উঠান বৈঠক, মোটরসাইকেল শোডাউন, পথসভা ও গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গণসংযোগে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ লিফলেট বিতরণ করছেন। এখন মনোনয়ন প্রত্যাশী বড় তিন দলের নেতারা দৌড়ঝাঁপ করছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায়। এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এরপরও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মহাজোট আতঙ্ক বিরাজ করছে। একইভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন আসনটি ‘উন্মুক্ত’ করা নিয়ে। ফলে এ আসনটি মহাজোটকে দেয়া হবে, না দুই জোটের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এ নিয়ে সংশয়ে আছেন জাপা ও আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কারণ মহাজোটগত নির্বাচন হলে এ আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিতে হবে। আর ‘উন্মুক্ত’ হলে আ.লীগ, বিএনপি ও জাপার মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। তবে বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিবেচনায় একাদশ নির্বাচনেও এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মীরা। এ কারণে সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এবার আসনটিতে নিজ দলীয় প্রার্থীর দাবিতে অনড়। দলীয় সভা-সমাবেশে নৌকার প্রার্থীর দাবিতে সোচ্চার রয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের আশঙ্কা, জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোট হলে এবারো নীলফামারী-৪ আসনটি তাদের হাতছাড়া হতে পারে। অপরদিকে স্থানীয় জাতীয় পার্টি মহাজোটগত নির্বাচন হবে এমন হিসাব ধরে দল গোছানোয় মনোযোগ দিয়েছে। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির আলহাজ শওকত চৌধুরী। তিনি বিগত পাঁচ বছরে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারেননি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা না করা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত হয়েছেন। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমাবেশ পর্যন্ত করেছে। অপরদিকে মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্ক এবং পুলিশি বাধায় প্রকাশ্যে তৎপর নয় বিএনপি ও তাদের শরিকরা। তারপরও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা ঘরোয়া তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে নীলফামারী-৪ আসনে সর্বাধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগের। দল থেকে এবার ১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ভিড়ে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভুগছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। প্রার্থীরা তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করায় দলে বহুমুখী ধারা তৈরি হয়েছে। তবে দলের নেতৃস্থানীয় নেতারা বলছেন, মনোনয়ন লাভের জন্য দলে প্রতিযোগিতা চলছে, কোনো বিভাজন নেই। দল যাকে মনোয়ন দেবে আমরা তার পক্ষে একাট্টা হয়ে কাজ করব। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলে যারা সক্রিয় রয়েছেন তারা হলেন সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল, সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখছেদুল মোমিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য আমেনা কোহিনুর আলম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী সিকান্দার আলী, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম সরকার, আওয়ামী লীগ কর আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমীর, সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার উপকমিটির সদস্য এডভোকেট মোশারফ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবুল, কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম ও পতিরাম চন্দ্র রায়। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বাদলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। এবার আমরা এ আসনে দলীয় অথবা মহাজোটগতভাবে নৌকার প্রার্থী চাই। অন্যথায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসনটি জাপা ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য ‘উন্মুক্ত’ রাখা হোক। এবার আমরা আসনটি পুনরুদ্ধারে দলের সবাই বদ্ধপরিকর। অপরদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে মহাজোট আতঙ্ক এবং জাতীয় পার্টির মহাজোট না উন্মুক্ত এমন ধোঁয়াশার মধ্যে বিএনপি রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। এ আসনে এবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার। তিনি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে সরে থাকলেও গণসংযোগ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে সক্রিয় রয়েছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে আরো মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম। এর মধ্যে শিল্পী বেবী নাজনীন গণসংযোগ ও দলীয় সভা-সমাবেশ করলেও বিলকিস ইসলাম মাঠে সক্রিয় নেই। নির্বাচনী এলাকায় তার বিলবোর্ড, ব্যানার শোভা পাচ্ছে। তবে তৃণমূলে বেবী নাজনীন দলীয় সভা-সমাবেশ করায় সৈয়দপুর জেলা বিএনপির মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। ফলে জেলা বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা সর্বাধিক। সেদিক থেকে তিনি দলের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে শক্ত ও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের দুঃশাসনে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে দুঃশাসনের জবাব দেবেন। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আলহাজ শওকত চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তিনি এত দিন জাতীয় পার্টির শক্তিশালী একক প্রার্থী হিসেবে থাকলেও জাপার আরো দুজন শক্ত প্রার্থী আবির্ভ‚ত হয়েছেন। এরা হলেন জাপা চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ভাগ্নে এবং একই আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত ড. আসাদুর রহমানের সন্তান আলহাজ আহসান আদেলুর রহমান আদেল এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলা জাপার সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রশিদুল ইসলাম। বিশেষ করে এরশাদের ভাগ্নে আদেলের আগমনে জাতীয় পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী নতুন মুখ আদেল জাপা নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। একইভাবে গণসংযোগ করছেন জাপার অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কিশোরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলামও। তবে জাপার প্রার্থিতা নিয়ে এমপি শওকত চৌধুরী ও আদেল গ্রুপের মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা লড়াই। এ নিয়ে এমপি শওকত চৌধুরী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, নীলফামারী-৪ আসনে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অন্য কোনো আমলে হয়নি। এসব কারণে এ আসনে জাপার জনপ্রিয়তা ও ভোট বেড়েছে। আসনটি ধরে রাখতে দল এবারো তাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নীলফামারী-৪ আসনে ভোটারদের মাঝে এরশাদের সস্তা আবেগ নেই। । বিপরীতে আওয়ামী লীগের অবস্থান চাঙ্গা হয়েছে। কারণ, এ আসনটি আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসাবে খ্যাত। অতীতের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বড় ভোটের ব্যবধানে যেমন জয়ী হয়েছে, তেমনি পরাজিত হয়েছে সামান্য ভোটে। তাদের মতো আওয়ামী লীগের ভোট কমেনি বরং ভোট বেড়েছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। দুই উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ মানুষ ও পেশাজীবীদের অভিমত, মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির এমপি আলহাজ শওকত চৌধুরী ক্ষমতায় থেকে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেননি। এমনকি স্থানীয় জনগণের কাক্সিক্ষত দাবিও পূরণ করতে পারেননি। কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক কলিম উদ্দিন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে অনেক বহিরাগত প্রার্থীর পদচারণা দেখা যাচ্ছে। আমরা বহিরাগত কাউকে আর এমপি বানাতে চাই না। আমরা চাই নিজ এলাকার কেউ এমপি হোক। সাধারণ মানুষের কারো কারো মতে এলাকার স্থানীয় প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। আর মহাজোট থেকে প্রার্থী হলে লড়াই হবে মহাজোট ও বিএনপির মধ্যে। এই আসনটি দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত হওয়ায় নিজ এলাকার কেউ প্রার্থী হলে ভোটারদের মধ্যে আবেগ ও আঞ্চলিকতা কাজ করবে, যা ভোটের হিসাব-নিকাশে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য অনেকের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App