×

জাতীয়

আওয়ামী লীগে ভিআইপি প্রার্থী, তৎপরতা নেই বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৮ পিএম

আওয়ামী লীগে ভিআইপি প্রার্থী, তৎপরতা নেই বিএনপির
দেশের উত্তর জনপদ দিনাজপুরে আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর নেই তেমন নির্বাচনী তৎপরতা। ভোটারদের মধ্যেও নেই নির্বাচনী আমেজ। দিনাজপুরের ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মূলত, বর্তমান দলীয় সাংসদরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। পদ-পদবির বিচারে তারা অনেকটা ভিআইপি প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হচ্ছেন। দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মামলা মোকদ্দমাসহ নানা প্রতিক‚লতায় চুপচাপ ছিলেন। গত রবিবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। আর জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেউ কেউ মাঠে সীমিত আকারে প্রচার প্রচারণা চালালেও আশঙ্কা আর অপেক্ষায় রয়েছেন নির্বাচনে রাজনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে। মহাজোট থেকে নির্বাচন করলেও তাদের ভাগ্যে মনোনয়ন জুটবে কিনা? এ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। দিনাজপুর জেলা ৬টি আসনেই বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদদের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। এই ৬টি আসনের মধ্যে দুজন পূর্ণমন্ত্রী, একজন জাতীয় সংসদের হুইপ, একজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ ও কাহারোল) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর হতে একবার জাতীয় পার্টি ও একবার জামায়াত ছাড়া বেশিরভাগ সময়ে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আছে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের জেলা সহসভাপতি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। এবারো তিনি দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ ছাড়া দলটির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাকারিয়া জাকা, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মো. আমিনুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আবু হুসেইন বিপু। আওয়ামী লীগের ঘাটি দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে এবারো মনোনয়ন চান দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তিতে তার শক্ত দলীয় প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়। বিএনপি থেকে আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। পাশাপাশি বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির বোচাগঞ্জের সভাপতি সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক ও উপজেলা বিএনপি নেতা মো. মঞ্জুরুল ইসলাম। দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সাংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিমের এবারো দলীয় মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তবে তার বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের এড়িয়ে চলার অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেন। দুর্নীতি মামলায় সাজা পাওয়ার পর খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা হারালে এ আসনে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল দলীয় প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মুকুর চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ জাহান হকের ছেলে শাহরিয়ার আক্তার হক ডন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা জামাল উদ্দিন মনোনয়ন প্রত্যাশী। দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনের বর্তমান সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে স্থানীয় নেতাকর্মী এবং ভোটারদের সঙ্গে তার যোগাযোগ কম। এ জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ ভোটাররা এখানে নতুন মুখ দেখতে চান। সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু একজন পরিছন্ন মানুষ হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান ডা. আমজাদ হোসেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান লুসাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি আলহাজ হাফিজুর রহমান। স্থানীয়ভাবে দলে তার কোনো অবস্থান না থাকার কারণে হাইকমান্ড থেকেও তাকে গণনায় আনবে না বলে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান। অপরদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আক্তারুজ্জামান মিয়া পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। এ আসনটিকে জামায়াতের ঘাঁটি বলা হয়। ফলে জামায়াত নেতাকর্মীরা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াতের সাবেক জেলা আমির আলহাজ আফতাব উদ্দিন মোল্লা মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেতে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনে এবারো ছয়বারের সাংসদ দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজার রহমান ফিজারে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া জাকির, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ফুলবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক সফেদ আশফাক তুহিন, এস এইচ সাজ্জাদ, মাহামুদুন নবী চৌধুরী ও পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সৈয়দুল আলম শান্তু মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে মামলা, হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও মাঠের রাজনীতি থেকে বিরত থেকেও সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক সাংসদ শিল্পপতি আলহাজ এ জেড এম রেজওয়ানুল হক। এ ছাড়া ৭নং সেক্টর মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মনসুর আলী সরকার ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফুলবাড়ী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতি দলীয় মনোনয়ন লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট) আসনের রাজনীতি অনেকটা আলাদা। দশবারের সংসদ নির্বাচনে এখানে একবারও জিততে পারেনি বিএনপি। এ কারণে আগামী নির্বাচনেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- বর্তমান সাংসদ শিবলী সাদিক, সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা, নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মন্ডল ও ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাকসুদুর রহমান চৌধুরী। বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে এই আসনে। এখানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত। তবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা জামায়াতকে ছাড় দিতে নারাজ। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি চিকিৎসক নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু, নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সুজন ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু। নির্বাচন প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এই দলটি। তিনি জানান, এমনিতেই দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। পাশাপাশি আগের চেয়ে এই জেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত। গত ১০ বছরে দিনাজপুরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনে এই জেলার ৬টি আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন বলে তার প্রত্যাশা। অপরদিকে হামলা-মামলার ভয়ে এতদিন নির্বাচনের মাঠে ছিলেন না দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এ প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এ জেড এম রেজওয়ানুল হক জানান, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেই অনুযায়ী কাজ করবেন তারা। তিনি জানান, আমরা নির্বিঘ্নে মাঠে কাজ করতে পারছি না। তবে মাঠ পর্যায়ে আমাদের সমর্থক আছে, আমরাও প্রস্তুত নির্বাচনের জন্য। এ জন্য দরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেউ কেউ নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। তবে তা সীমিত আকারে। রাজনৈতিক নতুন মেরুকরণ হলে কিংবা মহাজোট থেকে নির্বাচন করা হলে নির্বাচনে তাদের কি ভূমিকা হতে পারে এ নিয়ে চিন্তায় আছেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ জন্য জোরেশোরে মাঠেও নামছেন না তারা। এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল বলেন, নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত এবং প্রস্তুত রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। তবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যে কোনো মেরুকরণ হলে-তার সঙ্গে জাতীয় পার্টি থাকবে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আমেজ নেই সাধারণ ভোটারদের মাঝে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরি হলে ভোট দিতে যাব। কিন্তু প্রার্থীদের তেমন প্রচার-প্রচারণা না থাকায়, এ নিয়ে খুব একটা আলাপ-আলোচনা নেই বলে তারা জানান। তবে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, শেষ পর্যন্ত সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং তারা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App