×

জাতীয়

ইনু-হানিফের মর্যাদার লড়াই, কৌশলী অবস্থানে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৭ পিএম

ইনু-হানিফের মর্যাদার লড়াই, কৌশলী অবস্থানে বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছেন কুষ্টিয়ার রাজনীতিকরা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে নানা কায়দায় প্রচার চালাচ্ছেন তারা। পাড়ায় মহল্লায় শুভেচ্ছা সংবলিত রং-বেরংয়ের ব্যানার ফেস্টুন সাঁটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন। কেউ কেউ গণসংযোগও করছেন। প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে মহাজোটের প্রার্থিতা নিয়ে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের মধ্যে চলছে মর্যাদার লড়াই। কৌশলে ইনুকে হারানোর চেষ্টা করছেন হানিফ। অন্যদিকে ইনুও চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের প্রচারণার প্রতিযোগিতায় মাঠে নামতে পারছে না বিএনপি। তবে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগঠনকে নির্বাচনমুখী করেছেন। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গেও কৌশলে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। কুষ্টিয়া জেলায় সংসদীয় আসন সংখ্যা চার। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রউফ নির্বাচিত হন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জেলার ৪টি আসনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে মনোনয়নের দৌড়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বর্তমান সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরীর শক্ত প্রতিপক্ষ সাবেক সাংসদ দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ। রেজাউল হক চৌধুরী গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের প্রার্থী আফাজ উদ্দিন আহমেদকে পরাজিত করেন। কিন্তু সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর ছোট ভাই ও ছেলের নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়েছেন রেজাউল হক চৌধুরী। টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা কারণে সাংসদ নিজেও বিতর্কিত। এ কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এবারো আফাজ উদ্দিনকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবার মনোনয়ন দৌড়ে আফাজ উদ্দিনের পাল্লা ভারী। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আ ক ম সরোয়ার জাহান বাদশা ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ড. মোফাজ্জেল হকও মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে এ আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ রেজা আহমেদ বাচ্চু দলীয় প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলতাব হোসেনও মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন। কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ১৪ দলীয় ঐক্যজোটের পক্ষে প্রার্থী হতে পারেন। একই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটে। এ কারণে এ আসনে হানিফ ও ইনুর অনুগতদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছেই। আগামী নির্বাচনে হাসানুল হক ইনু নৌকার প্রার্থী হলে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল আরেফিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এ আসনে স্বস্তিতে নেই বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট। এখানে মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সাংসদ অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকন ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল গফুর জনসংযোগ করছেন। এখানে বিএনপির অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম যেমন দলের শক্ত প্রার্থী, তেমনি শরিক দল জাতীয় পার্টির (নাজিউর রহমান মঞ্জু) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনেরও ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক রয়েছে। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ দলের মনোনয়ন দৌড়ে সবার ওপরে রয়েছেন। এ আসনে এবারো তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি এমপি হওয়ার পর কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর মতো বড় উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশকিছু কাজ করেছেন। এদিকে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। কুষ্টিয়া সদরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শিল্পপতি প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শামীমুল হাসান অপুও দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় জনসংযোগ ও লবিং করছেন। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের এক হালি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বর্তমান সাংসদ আব্দুর রউফ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, সাবেক সাংসদ সুলতানা তরুন ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন জাফর। এদের মধ্যে আব্দুর রউফ ও সদর উদ্দিন খান মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনে জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক সাংসদ সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমী ও বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম আনছার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App