×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দ্বন্দ্ব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৪৪ পিএম

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দ্বন্দ্ব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-৪ আসনের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ নির্বাচনী আলোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। কে কোন দল থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে চাপা গুঞ্জন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনমুখী তৎপরতা চলছে জোরেশোরে। এ আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থীসহ একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব নেতার উপস্থিতি রয়েছে। তবে এ আসনে বড় দুদলেই রয়েছে চরম অন্তর্দ্ব›দ্ব। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দ্ব›দ্ব আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাধীনতার পর এ আসনে বেশির ভাগ সময় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একসময় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আধিপত্য ছিল বেশি। পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টি বিভক্ত হলে ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হন চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নেতা এম এম আমিন উদ্দিন। তিনি এখন বয়সের ভারে রাজনীতি থেকে দূরে। ফলে এ আসনে বিজেপির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। যশোর-৪ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৩ জন। যশোর জেলার অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে যশোর-৪ নির্বাচনী এলাকা গঠিত। এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টি এস আয়ুবকে ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক হুইপ শেখ আব্দুল ওহাবকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এনামুল হক বাবুলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে দলীয় অপর সূত্রে জানা গেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, নতুন প্রার্থী হিসেবে অভয়নগরের আওয়ামী পরিবারের সন্তান এনামুল হক বাবুল মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। তার অবস্থানও দলে সুসংহত। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক হুইপ শেখ আ. ওহাব দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করে চলেছেন। নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীরের নামও আওয়ামী লীগ দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। তিনিও এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বাঘারপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টি এস আয়ুব এবং অভয়নগর থানা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান। এ ছাড়া এইচ এম এরশাদের মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য এবং বর্তমানে বিএলডিপির চেয়ারম্যান এন নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। তিনি ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেট নিয়ে নির্বাচনে হেরে যান। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে অভয়নগর উপজেলার সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম সাব্বির আহমেদ এবং বাঘারপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক এড. জহিরুল হক মনোনয়নের ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন পাবে। সে ক্ষেত্রে সাব্বির আহমেদ হবেন ওই দলের প্রার্থী। জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত মাঠে নামতে দেখা যায়নি। দলীয় মনোনয়নের বাইরে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নিয়ে যশোর-৪ আসনের সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। কে কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, কে কেমন মানুষ, কার ব্যক্তি ইমেজ ও সামাজিক অবস্থান ভালো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা- সমালোচনা চলছে। নওয়াপাড়া মহিলা কলেজের প্রভাষক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সৎ ও যোগ্য সাংসদ চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে প্রার্থী নির্বাচন করা। ভবদহ কলেজের প্রভাষক ইকবাল হোসেন বলেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নিবেদিত প্রাণ এবং জনগণের সেবক হবে এমন সাংসদ চাই। নওয়াপাড়া বাজারের পান দোকানদার দিপু বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে। এলাকার উন্নয়ন ঘটাবে এমন প্রার্থী যেদলই দিক না কেন, তাকে ভোট দেব। বাঘারপাড়ার মুদি দোকানদার খলিলুর রহমান জানান, সৎ ও নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে ভোট দেব। রণজিত কুমার রায় বলেন, আমি এ আসন থেকে পরপর ২ বার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আমি বিগত দিনে ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে রয়েছি। ভবিষ্যতে এ উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। নেত্রী আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন এ বিশ্বাস আমি রাখি এবং নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমি মেনে চলব, সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যাব না। এনামুল হক বাবুল ভোরের কাগজকে বলেন, আমি ২০১৩ সালে দ্বিতীবারের মতো দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদকের এবং পরবর্তী সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ এবং মতবিনিময়ের মাধ্যমে দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কাজ করছি। আমার বিরুদ্ধে বিগত দিন নওয়াপাড়া পৌরসভা মেয়র থাকা অবস্থায় কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। নেত্রী আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায়ন করে আমাকে এ আসনে মনোনয়ন দেবেন বলে আশা রাখি। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার টি এস আয়ুব বলেন, জেল-জুলুম ও নির্র্যাতন ভোগ করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে আছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App