×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, বিরোধী জোটে মনি না মাহবুব?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৪৪ পিএম

আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, বিরোধী জোটে মনি না মাহবুব?
দেশের সর্ব দক্ষিণের একটি সংসদীয় এলাকা বরগুনা-২। আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনিই যেন ফের মনোনয়ন পান সে আশাতেই বুক বেঁধেছে স্থানীয় আ.লীগের বৃহৎ একটি অংশ। অপরদিকে রিমনকে ঠেকাতে ডজনখানেক মনোনয়ন প্রত্যাশী অবস্থান নিয়েছেন রাজধানীতে। পাথরঘাটা-বেতাগী-বামনার ভোটারসহ সবার দৃষ্টি এখন কেন্দ্রের দিকে। এদিকে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। এ ক্ষেত্রে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত বিএনপির সাবেক সাংসদ আলহাজ নূরুল ইসলাম মনি পোস্টার-ব্যানার দিয়ে এলাকায় আগেই জানান দিয়েছেন তিনি আসছেন বলে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন আগে থেকেই এখানকার বিএনপিতে আলোচনায় ছিলেন। এই হেভিওয়েট প্রার্থী কেন্দ্রে সুপরিচিত হলেও স্থানীয় বিএনপিতে ততটা গ্রহণযোগ্য নন বলে বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি। সে কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত মনিকেই ঘরে ফেরানো এবং ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে এমন গুঞ্জন রয়েছে এলাকায়। তবে একটি সূত্র বলছে, নূরুল ইসলাম মনি ইচ্ছা করলেই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। কারণ মামলা রয়েছে তার মাথার উপরে। কিন্তু বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা তা মানতে নারাজ। পাথরঘাটার রায়হানপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিমন একটি সভায় যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আ.লীগে যোগ দেন। রিমন বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি সেদিন থেকেই রয়েছে তার প্রতি। এ আসনের সাবেক সাংসদ গোলাম সবুর টুলু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রিমনের বাবা খলিলুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার বিষয়টি ছড়া আর কোনো বড় ইস্যু নিয়ে স্থানীয় আ.লীগের সুবিধাবাদীরা মাঠ গরম করতে পারছেন না বলেই দাবি তার সমর্থকদের। এ অবস্থায় আওয়ামী শিবিরের আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার। সারা এলাকাজুড়ে রয়েছে তার ব্যানার আর ফেস্টুন। বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে যুবলীগের কর্মী হিসেবে যিনি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন সক্রিয়। আ.লীগের হয়ে এখানে আরো যারা শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পেতে চাইছেন তাদের মধ্যে অন্যতম বরগুনা-ঝালকাঠি সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি তিনি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় স্পিøন্টারবিদ্ধ শরীর নিয়ে রাজনীতির মাঠে এগুচ্ছেন তিনি। অনেকে মনে করেন, সেই ত্যাগেরই পুরস্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাকে এমপি বানিয়ে। কাজ করে যাচ্ছেন তিনি বিরামহীন গতিতে। ইতোমধ্যে অসংখ্য দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থসহ নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আ.লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টুকুর প্রচারণা চলছে ব্যাপকভাবে। তিনি দাবি করেন, যেহেতু স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের মনোনয়ন দেয়া হবে না সে ক্ষেত্রে তাকেই দেয়া হতে পারে নৌকার মনোনয়ন। টুকু গত নির্বাচনেও দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়েছিলেন। মনোনয়ন চাচ্ছেন পাথরঘাটা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাবির হোসেন। তিনিও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন এবং শেখ হাসিনার নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। মনোনয়ন চান পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদ পরিবারের সন্তান রফিকুল ইসলাম রিপন। ’৭১-এর টালমাটাল দিনে মায়ের গর্ভে থাকা এই রিপনের বাবা শাহজাহানকে হত্যা করে হানাদার পাকিস্তান বাহিনী। ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রিপন কিছু দিতে পারুক আর না-ই পারুক; কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে অন্তত পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর নেন। মনোনয়ন পাওয়ার দাবি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শামসুল আলম। ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে ইতোমধ্যে তিনিও রয়েছেন আলোচনায়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে প্রথম এ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া শাহজাদা আ. মালেক খানের পরিবার থেকেও মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন ফারুক হোসেন মেজবাহ। মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট হারুন অর-রশিদ, আ.লীগ নেতা এন্টনী গোমেজ ও বরগুনার মেয়র বিশিষ্ট ঠিকাদার শাহাদৎ হোসেন। বর্তমান সাংসদকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে গ্রুপিং-লবিং চলার কারণে ভোটারদের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই এ আসনে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন। তবে আ.লীগের একাধিক সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে জানায়, মনি যদি এখানকার বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হন, তবে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে একমাত্র বর্তমান সাংসদ রিমনকেই দরকার বলে তারা মনে করছেন। তার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নূরুল ইসলাম মনি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করেন। যে কারণে আ.লীগেও তেমনই একজন প্রার্থী দরকার, যা একমাত্র রিমনকে দিয়েই সম্ভব। উল্লেখ্য, রিমন মসজিদে মসজিদে ও তাবলিগ জামাতে বছরের বড় একটি সময় ব্যয় করেন। এদিকে আলোচনায় রয়েছেন চরমোনাই পীরের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার হিরুও। কথিত আছে, আ.লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে খ্যাত হিন্দুরাও চরমোনাই পীরের মার্কা মিনারকে ‘মঠ’ আখ্যা দিয়ে ভোট দিয়ে ’৯১ তে বিজয়ী করেছিল তাকে। এক সময়ের জনপ্রিয় এই হিরুও ছিলেন আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। নানা কারণে বারবার দল পাল্টিয়ে এখন তার শেষ আশ্রয়স্থল চরমোনাই পীরের ইসলামী ঐক্যজোট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App