হুমায়ূন আহমেদের ভিন্ন নারী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:২৭ পিএম
হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে কয়েকজন নির্মাতা ছবি নির্মাণ করেছেন। যেখানে অনিবার্যভাবে এসেছে হুমায়ূন-সৃষ্ট নারী চরিত্র। যাদের মধ্যে শেষ এসেছে ‘রানু’। ‘দেবী’ ছবির যে চরিত্রে অভিনয় করে এই মুহ‚র্তে আলোচিত জয়া আহসান। এই অভিনেত্রী এবং তার আগে আরো যে অভিনেত্রী হুমায়ূনের নারী হয়েছেন, কিন্তু প্রয়াত নির্মাতার নির্দেশনায় কাজ করতে পারেননি, তাদের কথায় এই প্রতিবেদন। লিখেছেন স্বাক্ষর শওকতরানু চরিত্রে জয়া হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী চরিত্র মিসির আলী। এই চরিত্রকে প্রথম পর্দায় এনেছেন অনম বিশ্বাস। তারও নির্মাতা হিসেবে প্রথম ছবি ‘দেবী’। আর উপন্যাসা ‘দেবী’তেই প্রথম মিসির আলী পাঠকদের সামনে আসেন। ‘দেবী’ ছবির নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। তার অভিনীত চরিত্রের নাম রানু। হুমায়ূন আহমেদ অত্যন্ত মমতা নিয়ে এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন। রানু চরিত্রটি নিজের মধ্যে চমৎকারভাবে ধারণ করতে পেরেছেন বলেই সমালোচকরা মতামত দিয়েছেন। তার অভিনয়ের প্রশংসায় দর্শকরাও পঞ্চমুখ। বড় পর্দায় জয়ার অভিনয়কে দেশের দর্শকরা মিস করছেন অনেকদিন ধরে। কারণ জয়া বেশি সময় দিচ্ছেন কলকাতায়। তার পছন্দসই চরিত্র পাচ্ছেনও ওপারে। এপারে জয়ার মন পছন্দ চরিত্র মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত ‘দেবী’ মনে ধরে জয়ার। সরকারের কাছে অনুদানের জন্য দরখাস্ত দেন। অনুদান পাওয়ার পর নিজের পুঁজি যুক্ত করে প্রযোজক হিসেবে আবিভর্‚ত হোন জয়া। গত মাসের ১৬ অক্টোবর ‘দেবী’ মুক্তি পেয়ে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। প্রথমবারের মতো হুমায়ূনের নারী চরিত্রে কাজ করলেও প্রশংসা কুড়িয়ে নেন জয়া।
অরু চরিত্রে মাহি হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘কৃষ্ণপক্ষ’। এই উপন্যাসটিকেই ২০১৬ সালে রুপালি পর্দায় তুলে আনেন মেহের আফরোজ শাওন। তিনি এই প্রথম প্রয়াত স্বামীর কোনো গল্প থেকে চিত্রনাট্য করেন। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নির্মাতা হিসেবেও শাওনের প্রথম ছবি। নিজের পরিচালিত ছবিতে অভিনয় করেননি হুমায়ূন আহমেদের সর্বাধিক ছবির নায়িকা। পর্দার নেপথ্যে তিনি রয়ে যান। ‘কৃষ্ণপক্ষ’র কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র অরুর জন্য তিনি পছন্দ করেন এই সময়ের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহিকে। হুমায়ূনের নায়িকা হওয়ায় মাহি খুবই আলোচিত হোন। কিন্তু তার অভিনয় এত উঁচু দরে পৌঁছাতে পারেনি, যেখানে গেলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারতেন মাহি। তবে তার অভিনয় নিয়ে সন্তুষ্টিরই সুর শোনা গেছে পরিচালক শাওনের কণ্ঠে।
পুষ্প চরিত্রে সাবা হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে একাধিক ছবি নির্মাণ করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। যার মধ্যে একটি ‘প্রিয়তমেষু’। এটি ডিজিটাল ছবি হিসেবে সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়া প্রথম ছবি। ‘প্রিয়তমেষু’ নামের উপন্যাস থেকে একই নামের ছবিটি নির্মাণ করেন মোরশেদুল। এ ছবির গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র পুষ্প। এটি পর্দায় রূপায়ণ করেছেন সোহানা সাবা। একজন ধর্ষিতা নারীর চরিত্র। যে লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। জটিল একটি চরিত্র। সাবা চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। পর্দায় তার সহশিল্পী আফসানা মিমিও গল্প জমাট বাঁধতে সহায়তা করেছেন প্রাণপণ। ‘প্রিয়তমেষু’তেই সাবার প্রথম হুমায়ূনের গল্পে কাজ করা। তিথি চরিত্রে শাবনূর হুমায়ূন আহমেদের ‘জনম জনম’ উপন্যাস থেকে নির্মিত ছবি ‘নিরন্তর’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আবু সাইয়ীদ। ‘নিরন্তর’ অনেকগুলো বিদেশি উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে। এ ছবির কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র এক বারবণিতার। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবতি তিথি। সংসার টানতে নামে দেহ ব্যবসায়। এ কাজে তার সহযোগী ছোট ভাই। চিত্রনায়িকা শাবনূর তার চেনা গন্ডি থেকে বেরিয়ে ‘নিরন্তর’ ছবিটি করেন। যারাই ছবিটি দেখেছেন, শাবনূরের এমন অভিনয়কে অপ্রত্যাশিত বলেছেন। ভক্তরা এও মনে করেন, তিথি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শাবনূরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া দরকার ছিল। ‘নিরন্তর’-এ শাবনূর প্রথমবারের মতো হুমায়ূন আহমেদের কোনো নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। আর সুযোগ পেয়েই তিনি তার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। রাবেয়া চরিত্রে সোমা হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। এ দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি উপন্যাস। যুগ যুগ ধরে পাঠকের বুকশেলফে ঠাঁই পেয়েছে এই বই। এটিকে বইয়ের পাতা থেকে থেকে সেলুলয়েডে তুলে এনেছেন ‘নয়নের আলো’ খ্যাত পরিচালক বেলাল আহমেদ। ‘নন্দিত নরকে’র মুখ্য নারী চরিত্র রাবেয়া। প্রতিবন্ধী এই মেয়ের জীবনে নেমে আসে এক লাঞ্ছনা। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবিটি আবর্তিত। রাবেয়া চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কাড়েন সুমনা সোমা। তিনি ‘রাজধানী’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন। খুব বেশি বড় ছবি না করলেও ‘নন্দিত নরকে’ তাকে আলাদা একটি পরিচিতি দিয়েছে। রাবেয়া চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে সোমা তার জায়গা থেকে অবিরাম চেষ্টা করেছেন।