×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সরব, নীরব বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম

আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সরব, নীরব বিএনপি
চাঁদপুর-৫ আসনে জোরেশোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এবার কোন্দল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে নিজেদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও জামায়াতের উপর ভর করে গোপনে এগুচ্ছে বিএনপি। এ আসনে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ৫ বার, বিএনপি ১৯৯৬-এর ফেব্রæয়ারিসহ ৪ বার ও জাতীয় পার্টি ১ বার নির্বাচিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এম আব্দুস ছাত্তার, ১৯৭৯ সালে বিএনপির এম এ মতিন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির আলহাজ আব্দুল ওয়াদুদ খান, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির এম এ মতিন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম, ২০০১ সালে বিএনপির এম এ মতিন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম নির্বাচিত হন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সাংসদ মেজর রফিকসহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ও জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসাইন, সাবেক সাংসদ এডভোকেট আবু জাফর মাঈন উদ্দিনের মেয়ে ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের (লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর) সংসদ সদস্য এডভোকেট নুরজাহান বেগম মুক্তা, আ.লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ফজলুল হক, দুদক ও এন এস আইর সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার সালাউদ্দিন, ক্রীড়া সংগঠক ও ঢাকার কলাবাগান ক্লাব সভাপতি এবং তাঁতী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিকুল আলম ফিরোজ, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রশিদ মজুমদার, মহাজোটভুক্ত ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা বাহাদুর শাহ্ মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা সবাই উভয় উপজেলায় গণসংযোগ করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দলের সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর রফিকের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। রফিকুল ইসলামের বিপক্ষে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ জন একমঞ্চে একাট্টা হন। তারা সাংসদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও বিপদকালে নেতাকর্মীদের পাশে না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে সভা সমাবেশ করে আসছেন। তাদের কথা, রফিকুল ইসলাম ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ জনের মধ্যে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হয় তাতে তাদের আপত্তি নেই। তারা এ আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দেবেন বলে বিভিন্ন মঞ্চে বক্তব্য দেন। নির্বাচনের আগে এই দ্ব›দ্ব নিরসন না হলে এ আসনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। মনোনয়ন নয়, সরকারের উন্নয়ন ও আবার ক্ষমতায় আসলে কর্মপরিকল্পনার কথা তৃনমূলে পৌঁছে দিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশ দেন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের। ওই নির্দেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তৃণমূলে নৌকার বিজয় নিশ্চিতের জন্য ভোট চাইছেন সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম। তিনি উভয় উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভাসহ প্রত্যেক ওয়ার্ড আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেন, বিএনপির জোট সরকার আমলে এ আসনে মাত্র ১০ কি.মি. রাস্তা ও ডাকাতিয়া নদীর ওপর সুচিপাড়া ব্রিজ নির্মাণ ছাড়া কিছুই করতে পারে নাই। আমাদের আ.লীগ সরকার আমলে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে প্রায় ৩০০ কি.মি. রাস্তা পাকাকরণ, সাড়ে ৬০০ ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ, শাহরাস্তি করফুলন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয়করণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ শতভাগ নিশ্চিত করা, শাহরাস্তি উপজেলার শাহরাস্তি গেট ভায়া শোরসাক-পানিওয়ালা এবং মেহার কালীবাড়ি ভায়া সুচিপাড়া-মোল্লাদর্জা, অফিস চিতোষী ভায়া নরিংপুর-পানিওয়ালা জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর ওপর ৮টি ব্রিজ নির্মাণ করে উভয়পাড়ের জনগণের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির নজির স্থাপন করে এ সরকার। এ ছাড়া বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্ব, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান এবং ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান রাখা সাংসদ রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তমের দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখায় এ আসনের জনগণ রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তমকেই আবার সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান বলে দলীয় নেতাকর্মীরা দাবি করেন। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির ঘরে অন্তর্দ্ব›দ্ব ও গ্রুপিং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পৃথকভাবে ঘরোয়া পরিবেশে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা ছাড়া মাঠে নেতাকর্মীদের দেখা যায় না বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণা তেমন চোখে না পড়লেও জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে যে কোনো মুুহূর্তে তারা দ্ব›দ্ব ভুলে একাট্টা হবেন বলে দলের অনেকেই মন্তব্য করেন। এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন চারবারের নির্বাচিত সাংসদ এম এ মতিন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলার বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবির পাটোওয়ারী, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। চারবারের নির্বাচিত সাবেক সাংসদ এম এ মতিন তার সরকারের আমলে করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশায় ঘরোয়া পরিবেশে কাজ করে যাচ্ছেন। অপরদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক ওয়ান-ইলেভেনের সময় আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ায় খালেদা জিয়া তাকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ দিয়ে নির্বাচন করান। তিনি অসংখ্যা নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলায় অর্থনৈতিক ও আইনি সহায়তা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে তিনি মাঠে সভা-সমাবেশ করছেন। দল নির্বাচনে গেলে তিনি মনোনয়ন পাবেন ও বিজয়ী হবেন বলে নেতাকর্মীরা দাবি করেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু, জাপা নেতা হারুন মুন্সী, জাতীয় পার্টির রিয়াদ সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কাজল। এদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা গোপনে মাঠপর্যায়ে নিজস্ব কৌশলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থীর তালিকায় শাহরাস্তি উপজেলা জামায়াতের আমির ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ভোলদীঘি মাদ্রাসার অধ্যাপক মাওলানা আবুল হোসাইনের নাম শোনা যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App