×

পুরনো খবর

জাপার সঙ্গে আওয়ামীলীগের মর্যাদার লড়াই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:২১ পিএম

জাপার সঙ্গে আওয়ামীলীগের মর্যাদার লড়াই
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম-২ (সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট) আসনে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা বাড়ছে। এসব প্রার্থী দিন-রাত ছুটে বেড়াচ্ছেন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। এ কারণে ভোটের আমেজ এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও। পছন্দের দল ও প্রার্থীকে জেতাতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আসনটি জেলা সদরে হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে এর গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ জেলা সদর দখলে থাকলে সব রাজনৈতিক দল সমগ্র জেলায় তাদের দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে। তবে এ আসনের জাপা দলীয় এমপি তাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্প্রতি মারা যাওয়ায় জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। জাপার দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ আসনটি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে জাপা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমেদকে দলে নিয়ে জেলা জাপার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির থাকলেও বর্তমানে পালে হাওয়া লেগেছে। এ আসনের জাপা নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই চাঙ্গা। জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, শাসকদলের বিরুদ্ধে শিল্পপতি পনির উদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করা হলে আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হবে। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মুহাম্মদ আব্দুস সালাম ও প্রয়াত তাজুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই এবং জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি চৌধুরী সফিকুল ইসলামও মনোনয়ন চাইবেন। মহাজোট হলেও জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হলে তারই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। জোট-মহাজোট না হলে জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে মর্যাদার। অন্যদিকে এ আসনটি দখলে নিতে মরিয়া শাসকদল আওয়ামী লীগও। তবে শাসক দলে উপদলীয় কোন্দল থাকায় মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা গেছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাফর আলীর পক্ষে স্থানীয় বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত থাকেন। তখন থেকেই দলে গ্রুপিং চরমে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা। এ রকম পরিস্থিতিতে জেলায় সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হলেও নেতাকর্মীদের কারণে তা জনগণের মাঝে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হাফ ডজন নেতা ব্যক্তিগতভাবে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। সব মিলিয়ে শাসক দলের প্রার্থী যেই হোন না কেন, কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হলে তাদের পক্ষে আসনটি দখলে নেয়া কঠিন হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. জাফর আলী, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আ আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মন্ডল, সহসভাপতি চাষী করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলহাজ রুহুল আমিন দুলাল। এদের অনেকেই দলীয় প্রধানের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে নির্বাচনী এলাকার হাট-বাজারগুলোতে টাঙিয়ে দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এসব নেতার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও একে অপরের সমালোচনায় মুখর থাকায় জেলায় সরকারের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে জেলা সদরে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন লক্ষ করা যায়নি। ফলে সদরের এ গুরুত্বপূর্ণ আসনটি তাদের দখলে নেয়া বেশ কঠিন হবে। জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভির উল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা উভয়েই সদরের বাসিন্দা না হওয়ায় এবং শহরে স্থায়ীভাবে অবস্থান না করায় এখানে দলটির সাংগঠনিক ভিত বেশ নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। এমনকি এখানে দলের কোনো ডাকসাইটে নেতা নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এ দুনেতা দলের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় না থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা স্থবির। এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক, দলের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম বেবু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এদিকে, গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলীকে জিতিয়ে দিতে জেলা বিএনপির কতিপয় নেতা গোপনে তার পক্ষে কাজ করায় ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ রয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রার্থীর চেয়ে অধিকাংশ নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন। তাদের মতে, এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত বিএনপির দখলে আসবে। জনশ্রুতি রয়েছে সাইফুর রহমান রানা সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদের বোন জামাই। মনোনয়ন নিয়ে তাদের মাঝে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। তবে এ দলটি থেকে কে প্রার্থী হবেন তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App