×

জাতীয়

রাজউকের শত কোটি টাকার প্লট হাতছাড়া!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৭ পিএম

রাজউকের শত কোটি টাকার প্লট হাতছাড়া!
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রায় শত কোটি টাকার মূল্যবান একটি প্লট হাতছাড়া হয়ে গেছে। রাজউকের বির্তকিত তালিকাভুক্ত (১০) গুলশান এলাকার প্রায় দেড় বিঘা আয়তনের এ প্লটটি সম্প্রতি রাজউকের বোর্ড সভা থেকে কয়েক ব্যক্তির অনুক‚লে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গুলশান এলাকার সিডব্লিউএন(এ)-এর ১ নম্বর প্লটটি গত ১০ বছরের চেষ্টার পর সম্প্রতি রাজউক কর্তৃপক্ষের হাত থেকে অবমুক্ত করে নেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে রাজউকের তালিকায় দীর্ঘ সময় স্থান পাওয়া বির্তকিত ৩৯টি প্লট থেকে ১টি কমে গেল। এ ঘটনার পর রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এখন বাকি প্লটগুলো হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এ প্লটটি বিতর্কিত তালিকাভুক্ত তা অস্বীকার করছি না। আমরা এ প্লটের মালিকানা নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ করে সঠিক মালিকের নামে নামজারি করেছি। এটি নিয়ে দীর্ঘ সময় সিআইডি ও রাজউকের নিজস্ব তদন্ত দল কাজ করে তা মুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে। এরপর বোর্ডের মাধ্যমে তা মালিকদের বরাবরে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজউকের বোর্ড সভায় গুলশানের মূল্যবান এ প্লটটি আনিস ও শওকত আলী চৌধুরী গং-এর অনুক‚লে নামজারি ও ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। এখানে একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন শওকত চৌধুরী গং-এর পক্ষে রয়েছে বলে মতামত তুলে ধরা হয়। অথচ গুলশানের ১ নম্বর প্লট নামে পরিচিত এ জমির মালিকানা দাবিদার ছিল একাধিক। গত ১০ বছর ধরে তিন-চারজন মালিক প্লটটি হাতিয়ে নিতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেই সময়ে বির্তকিত তালিকাভুক্ত এ প্লটটি কাউকে দিতে রাজি হয়নি রাজউক। কিন্তু হাল ছাড়েনি শওকত গং। তারা সর্বশেষ সব পক্ষকে সরিয়ে নিজেদের পক্ষে প্লটটি নিতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুলশান ১ নম্বর প্লটটিতে একতলা আধাপাকা ভবন নির্মাণ করে সেখানে গাড়ির শোরুম করা হয়েছে। ভবনের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে শওকত আলী চৌধুরীদের নামে দুটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। শোরুমটিও তাদের বলে জানা যায়। দেড় বিঘা আয়তনের এ প্লটে এখন বহুতল ভবন নির্মাণও সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইতোমধ্যে রাজউক থেকে সব ধরনের বৈধতা নিজেদের অনুক‚লে নিতে সক্ষম হয়েছে তারা। রাজউকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গুলশান, বনানী, মহাখালী ও দিলকুশা এলাকায় এমন ৩৯টি বিতর্কিত প্লট রয়েছে। প্রতিটির আয়তন ১৬ কাঠা থেকে শুরু করে এক বিঘার উপরে। এসব প্লটের প্রতিটির দাম কম করে হলেও শত কোটি টাকা। এসবের মধ্যে গুলশান এলাকায় রয়েছে মো. ওহীদুল নবী সিইএন(বি) প্লট নম্বর-১৭, আ. জব্বার এসডব্লিউসি প্লট নং-২, নেছার মোহাম্মদ খান সিইএন(ডি) প্লট নং-২০, টি এ খান ১৮/সি ও ১৮/ডি, আরিফুল হাসান সিইএন(জি) প্লট নং-১৬/বি, মো. শাহাবুদ্দিন সিইএন(এইচ) প্লট নং-৪, হারুন নেছা সিইএন (এইচ) প্লট নং-৩২, বিলকিস বানু সিইএস(এ) প্লট নং-৪৭, নীঘাত পারভীন সিইএস(এফ) প্লট নং-২, আসাদুজ্জামান ও শওকত আলী চৌধুরী সিডব্লিউএন(এ) প্লট নং-১, এস এম তাকী ও হীন কোরাইশী সিডব্লিউএন(এ) প্লট নং-২, রৌশনআরা বেগম সিডব্লিউএন(এ) প্লট নং ১৮এ/বি, হাবিব সুলতানা জায়েদী (ফালু) সিডব্লিউএন(এ) প্লট নং-৪৩, মোক্তার আহম্মদ আনসারী সিডব্লিউএন(বি) প্লট নং-২৮, হোসনে আরা বেগম সিডব্লিউএন(বি) প্লট নং-২৮, এস কে রেজা চৌধুরী সিডব্লিউএন(বি) প্লট নং ৩৪, মুস্তারী বেগ সিডব্লিউএন(সি) প্লট নং-৩, মো. আব্দুল্লাহ সিডব্লিউএস(এ) প্লট নং-৮, শামসুল হক সিডব্লিউএস(সি) প্লট নং-৫, ইউসুফ আলী খান এনই(বি) প্লট নং-১/বি, এম এ ছাত্তার এনই(এম) প্লট নং-৪, আব্দুল মালেক এনডব্লিউ (১) প্লট নং-৩, মাহবুব আনাম এনডব্লিউ (১) প্লট নং-৬, মোস্তাফা হায়দার এনডব্লিউ(কে) প্লট নং-১১, আফসার উদ্দিন এসডব্লিউ (এ) প্লট নং-২৯, রওশন আরা বেগম গং এসডব্লিউ(এইচ) প্লট নং-৭, এম এম জলিল খান সিইএন(এ) প্লট নং-১৫/সি। বনানী এলাকায় রয়েছে মো. নেহাল উদ্দিন সি-৯৪, আবসার আলম উসমানী বি-৪৭, মো. আইয়ূব আনসারী আ-৩৮, ওয়াহিদুর রহমান আই-১৪, সাইদ নূরুল গনি জি-২৩। ২২, দিলকুশায় আব্দুল জলিল এবং মহাখালীতে মেহেরুন্নেসা গং ৬০ নম্বর প্লট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের সাবেক একাধিক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, ৩৯টি মহামূল্যবান প্লট বাগিয়ে নিতে মরিয়া শতাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। শত কোটি টাকা মূল্যের একেকটি প্লটের দাবিদার দাঁড়িয়ে গেছে ১০ থেকে ১৫ জন। আবার কেউ কেউ প্লট দখলে রেখে নতুন নতুন মালিক সাজিয়ে এর বৈধতা পেতে উঠেপড়ে লেগেছে। আর এসব প্লট নিয়ে বিপাকে রয়েছে রাজউক। এক প্লটের একাধিক মালিক হওয়ায় রাজউকের পক্ষ থেকে এসব প্লট ‘বিতর্কিত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্লটগুলো নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত শঙ্কিত ছিলাম। এখন যদি বিতর্কিত তালিকা থেকে কেউ প্লট ছেড়ে দিয়ে থাকে তা নৈতিকতা বির্বজিত হবে এবং এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক লাভবান হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App