×

জাতীয়

ফুরফুরে মেজাজে আওয়ামী লীগ, মামলায় এলাকা ছাড়া বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:১৫ পিএম

ফুরফুরে মেজাজে আওয়ামী লীগ, মামলায় এলাকা ছাড়া বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ফুরফুরে মেজাজে ভোটের মাঠ দখলে রেখেছেন। তারা গণসংযোগ, কেন্দ্র কমিটি ও শোডাউন করছেন। অন্যদিকে মামলা-হামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্কে মাঠেই নামতে পারছেন না দেশের বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এমনকি ক্ষমতাসীনদের নজরদারির কারণে তারা তৃণমূলের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। গাজীপুরের ৫টি আসনেই দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ নেতারা গণসংযোগ ও শোডাউনসহ নানা ধরনের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। নির্বাচনী সভা, কেন্দ্র কমিটি গঠন, উঠান বৈঠক ও নৌকা নিয়ে নদী পথে প্রচারণাসহ নানাভাবে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে আনছেন তারা। এবারো পাঁচটি আসনেই জয়লাভ করতে চান আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশির ভাগ নেতাই একাধিক মামলায় জর্জরিত। গ্রেপ্তার এড়াতে তাদের অনেকেই এলাকা ছাড়া। সরকারের দমন নীতি, পুলিশ ও প্রশাসনের কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তারা সাধারণ জনগণের কাছে যেতে পারছেন না। তবে তারা ফেসবুকে নির্বাচনের কথা জানান দিয়ে কর্মীদের মাঠে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। গাজীপুর-১ আসনের বর্তমান সাংসদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঢাকায় থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। প্রায়ই তিনি এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এলাকায় তার নির্বাচনী পোস্টারও দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন শিকদার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, ব্যবসায়ী নূরে আলম সিদ্দিকী এবং মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সিঙ্গাপুর থাকাকালে সবশেষ গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে জয়দেবপুর থানায় পুলিশের দায়ের করা একটি মামলারও আসামি তিনি। এ আসনের বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা হুমায়ূন কবির খান ৩১টি মামলার আসামি। অপর প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহম্মেদ ১৫টি মামলার আসামি। অপর সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য কালিয়াকৈর পৌর মেয়র মজিবুর রহমান ২ থানায় ৩টি মামলার আসামি। গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও জেলার প্রাণকেন্দ্রের নির্বাচনী এলাকা গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. জাহিদ আহসান রাসেল। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী এডভোকেট আজমত উল্লা খান হাই কমান্ডের অপেক্ষায় আছেন। অপরদিকে এ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান প্রায় দুবছর জেল খেটে এখন ৩০টি মামলা মাথায় নিয়ে এবং শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় রয়েছেন। দলটির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাসান উদ্দিন সরকারের নামে মামলা আছে তিনটি। এ ছাড়া বিএনপির মনোননয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ৭টি, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জেলা যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলমের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। গাজীপুর-৩ আসনের বর্তমান এমপি এডভোকেট রহমত আলী শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও নিজেকে এলাকাবাসীর মাঝে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে দিচ্ছেন তার ছেলে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল হাসান দুর্জয়কে। এমপি প্রার্থী হিসেবে দুর্জয়ের নির্বাচনী বিলবোর্ড ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা। পিছিয়ে নেই জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজও। সড়ক জুড়ে তার বিলবোর্ড, পোস্টার ও তোরণের কমতি নেই। অন্যদিকে, এই আসনে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নেই। কারণ দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সবুজ ৯টি, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পীরজাদা এস এম রুহুল আমীন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালেবের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা, উপজেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান ফকিরের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে। গাজীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি ও তার ফুফাতো ভাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ব্যবসায়ী আলম আহমেদ। নির্বাচনী এলাকায় তাদের পোস্টার, ফ্যাস্টুন ও তোরণ রয়েছে। এই আসনে বিএনপির মূল প্রার্থী প্রয়াত হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। রিয়াজুল হান্নান আগে মামলায় না পড়লেও সম্প্রতি জেলা শহরের দলীয় একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জয়দেবপুর থানায় পুলিশের দেয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় আসামি হয়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। তিনি জানান, সরকার ও প্রশাসনের নিপীড়নমূলক ভূমিকায়, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে শুধু বিয়েসাদি কিংবা জানাজার নামাজের মতো কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এলাকায় যেতে পারেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে তাদের দলীয় ২০ জন লোকও একসঙ্গে জড়ো হতে পারেন না। তবে দল নির্বাচনে গেলে তাদেরও সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে এবং জনগণ তাদের ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন বলেও তিনি জানান। গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী শহীদ ময়েজ উদ্দিনের কন্যা বর্তমান এমপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতার উজ্জামান। তবে এলাকায় নেই এই আসনের বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন। তার বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা রয়েছে। শুধু তিনি নন, জেলার সব উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, এমনকি দলের সমর্থকরা পর্যন্ত সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাজানো মামলার আসামি হয়েছেন। পুলিশি হয়রানির কারণে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। গত ১০ বছর ধরে স্বাধীনভাবে দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না। তিনি বলেন, অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী দুঃশাসনের জবাব ঠিকই দেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App