×

মুক্তচিন্তা

ওয়াসার পানির মান প্রশ্নবিদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৯ পিএম

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। রাজধানীবাসীর পানি সরবরাহের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার পানির ওপর ন্যূনতম ভরসা করার কোনো উপায় নেই। পানি দুর্গন্ধযুক্ত। পানিতে ময়লা-আবর্জনা-কেঁচো ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এই নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি, সরকারের নানা উদ্যোগও কম হয়নি। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

গত মঙ্গলবার ওয়াসার পানির মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটিকে আগামী ২ মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপদ পানি সরবরাহে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে আদালত।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওয়াসার এমডিসহ আটজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ এ রিট আবেদনটি করেন। জানা যায়, রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ কোটি লিটারের মতো। এর ৭৮ শতাংশ তোলা হয় গভীর নলকূপ দিয়ে, বাকিটা বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাঁচটি শোধনাগারে শোধনের মাধ্যমে। যা শোধনের পরও দূষিত ও মানহীনই থাকছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানে বিষাক্ত হয়ে পড়া বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এ দুটি নদীর পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান এতই বেশি যে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য শোধনের সময় মেশানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন, এলাম (চুন) ও লাইন (ফিটকিরি)। তারপরও দুর্গন্ধ থাকছে পানিতে। অনেক সময় শোধিত পানি থেকে বের হয় ক্লোরিনের গন্ধ। যদিও ওয়াসার দাবি, শোধিত পানিতে সমস্যা নেই।

এদিকে বিভিন্ন স্থানের পাইপলাইনে রয়েছে অসংখ্য ফুটো বা লিকেজ। এসব ফুটো দিয়ে বর্জ্য ঢুকছে পাইপলাইনের মধ্যে। একইভাবে বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইনেও। এ পানি অতিমাত্রায় ফুটানোর পরও পানযোগ্য করতে পারছেন না নগরবাসী। ওই পানি ব্যবহারে চোখ জ্বলা, গা চুলকানোসহ নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কলেরা হাসপাতালেও বেড়ে যায় রোগীদের ভিড়।

আমরা মনে করি, পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলার অবকাশ নেই। রাজধানীতে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পানির বিকল্প উৎস যেমন সন্ধান ও ব্যবহার করতে হবে তেমনি ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম আরো বাড়াতে ও গতিশীল করতে হবে।

এই মুহূর্তে ঢাকা ওয়াসাকে সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে মনোযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে কোনো মূল্যে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি নদী দূষণ রোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App