×

মুক্তচিন্তা

সংলাপে কোন জোটের কী উদ্দেশ্য, স্বার্থ এবং অবস্থান

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২২ পিএম

নির্বাচন উপলক্ষেই রাজনৈতিক দল, জোট ও সরকার সংলাপ করবে, আলোচনা করবে এটিই যেন শেষ কথা না হয়। তাহলে মনে হবে এসব সংলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে কেবলই ক্ষমতায় যাওয়া, ভোগ করা, নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নেয়া। গণতন্ত্র তাতে খুব বেশি লাভবান হওয়ার আশা করতে পারে না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল, জোট ও সরকারের মধ্যে আলোচনা ও সৌহার্দ্য আবশ্যকীয়।

গত ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে রাজনীতিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোটসমূহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপ চলছে। মূলত রাজনৈতিক দলসমূহ এখন নির্বাচনকে সম্মুখে রেখে নানা কৌশলগত বিবেচনা থেকে এসব জোট গঠন করেছে। যেমন বিএনপির ২০ দলীয় একটি জোট থাকা সত্ত্বেও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরেকটি জোট গঠন করেছে। সম্ভবত ২০ দলীয় ঐক্যজোটে জামায়াত থাকায় বিএনপি কৌশলগত কারণে নতুন ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সরকার, জনগণ এবং বিদেশিদের আস্থা অর্জনের জন্য নতুন এই জোটটি গঠন করেছে। এ পর্যায়ে ২০ দলীয় জোট অনেকটাই যেন আলোচনা-সমালোচনা থেকে আড়ালে পড়ে গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আড়ালে থাকলেও বিএনপির নির্বাচনী কৌশলগত ঐক্যজোটই শুধু নয় আদর্শগতভাবে নৈকট্যের জোট হিসেবে অটুটু রয়েছে। তবে সূচিত সংলাপে বিএনপি ঐক্যফ্রন্টকে সম্মুখে এনেছে, নেপথ্যে ২০ দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ও শলাপরামর্শ রয়েছে বলেই মনে হয়।

যুক্তফ্রন্ট নামে অন্য আরেকটি জোট ডা. বি চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট আগে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থাকলেও অতিসম্প্রতি ঐক্যফ্রন্ট থেকে যুক্তফ্রন্টকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়। ফলে বি চৌধুরী তার ঘনিষ্ঠ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টকে সম্প্রসারিত করেন। এ ছাড়া বাম রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জোট রয়েছে, ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর আরেকটি জোট রয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেশ আগে থেকেই চৌদ্দ দলীয় ঐক্যজোট এক সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, ২০০৯ সাল থেকে সরকার ও সংসদে অবস্থান করছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরেকটি জোট গঠন করলেও দলটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২০০৬ সাল থেকে মহাজোট নামে সমান্তরালভাবে অবস্থান করছে। এই জোটগুলোই এখন নির্বাচন উপলক্ষে যার যার রাজনৈতিক লক্ষ্য ও স্বার্থ কায়েমের উদ্দেশ্যে সংলাপে বসছে। ইতোমধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট এবং বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং ১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টির নানা দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেছেন। দেশবাসী সেসব আলোচনা গভীর উৎসাহের সঙ্গে লক্ষ করেছেন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের নির্বাচন উপলক্ষে কোনো সরকারপ্রধান বা তার দল ও জোটবিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সরাসরি কোনো সংলাপে বসেনি, সাড়াও দেয়নি। ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার করায় বিদেশি সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি মধ্যস্থতায় আলোচনা হলেও কোনো সংলাপই শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি, আলোর মুখ দেখেনি। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন, তাদের দাবিদাওয়া শোনলেন, নিজের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে যে রাজনৈতিক অচল অবস্থা ক’দিন আগেও মিডিয়াগুলোর আলোচনায় ও লেখালেখিতে বেশ হতাশার সঙ্গে উঠে আসছিল সেই জায়গায় বরফ গলতে শুরু করেছে, নতুন বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, দেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে যেসব হতাশা ও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল সেগুলোর অনেকটাই কেটে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এটি ভাবতে বেশ আশ্চর্য লাগে যে, বাংলাদেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল এখন নিজস্ব স্বকীয়তার চাইতে জোটগতভাবে পরিচিত হতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। সে কারণেই সংলাপে এখন দলের চাইতে জোটের পরিচয়ে অনেক নেতাকেই অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। কারণ এসব নেতার দলগুলো এতই ছোট যে তাদের রাজনীতির বাজারে যেমন খুব একটা পরিচিতি নেই। ভোটের ময়দানেও খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারপরও তারা বড় দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধছেন, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির দফারফা করছেন, জোটে থাকার সুবাদে মঞ্চে বসার আসন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সংলাপেও বসার সুযোগ পাচ্ছেন। এবার আরেকটি বিষয় বেশ উল্লেখ করার মতো তা হচ্ছে বিএনপির মতো একটি বিশাল রাজনৈতিক দল ছোট ছোট নেতা সর্বস্ব বেশকিছু দলের কাছে আশ্রয় নিয়েছে যেগুলোর সঙ্গে আদর্শগত এবং ভোটের হিসাবগতভাবেও বিএনপির বসার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের বিচারিক রায়ের কারণে দলটি নিজের ২০ দলীয় জোটকে আড়ালে রেখে ঐক্যফ্রন্টকে সংলাপে অংশীদার হিসেবে নিয়েছিল। প্রথম সংলাপটি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি বেশ আগে থেকে সংলাপের দাবি করলেও সরকার এতদিন তাদের দাবি নাকচ করে দিয়েছিল। মূলত জামায়াত এবং একুশ আগস্টসহ নানা ক্ষতের আঘাত আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বহন করা বেশ কঠিন- এই কারণে আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এই শক্তির সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি ছিলেন না। ফলে বিএনপির মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, শেখ হাসিনা যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করিয়ে নিতে চান। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিষয়টি সেভাবেই প্রচারিত হচ্ছিল। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে একটি হতাশাজনক প্রচারণা পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা বারবারই বলে আসছিলেন যে, তিনি সংবিধানের ধারা মোতাবেক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে দেশের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে চান, তাতে তিনি জয়ী না হলেও তার কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু দেশের মানুষ বিষয়টিকে সেভাবে খুব একটি বিশ্বাস করছিল না। তবে বিএনপির প্রতিও অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন জানিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সরকারকে হঠিয়ে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জায়গায় তারা নেই। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে বিএনপি ধরেই নিয়েছিল যে সরকার শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নিজেদের পছন্দমতো নির্বাচন করিয়ে নেবে, বিষয়টিকে তারা মাঠে ছড়িয়ে দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করার শেষ চেষ্টা করবে বলে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের চিঠি খুব তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে তাদের সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানান। বিষয়টি দেশব্যাপী একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অবশেষে সেই সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতা অংশ নিয়েছিলেন, প্রায় চার ঘণ্টার মতো সেই আলোচনা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ সেই আলোচনার অনেক কিছুই পরবর্তী সময়ে জানতে পেরেছে। বিএনপি নেতাদের সেই বৈঠকে সন্তুষ্ট হতে পারেননি, কিন্তু ড. কামাল হোসেন ‘ভালো আলোচনা বলে’ এটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিএনপির মূল লক্ষ্য হচ্ছে তাদের দলীয় চেয়ারপারসনের নিদেনপক্ষে জামিনে মুক্তি আদায় করা, অন্য দাবিগুলো তাদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত গৌণ। ফলে সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর বিচারিক বিষয়ে তার করণীয় সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করায় বিএনপি নেতাদের হতাশ হয়েছেন। বিএনপি সে কারণেই দ্বিতীয় পর্বে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন, একইভাবে নির্বাচন কমিশনকে সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। এর মাধ্যমে যে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে তা হলো ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা নামা পেশ করেছে সেটি আলোচনার টেবিলে উপস্থাপিত হলেও বিএনপির মূল লক্ষ্য তাদের দলীয় চেয়ারপারসনকে দরকষাকষির মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করে আনা। এটি বিএনপির নেতাদের নানা বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হচ্ছে। তারা হুঙ্কার দিচ্ছেন যে, খালেদা জিয়া ব্যতীত বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে না, নির্বাচন হতেও দেবে না। প্রয়োজনে চূড়ান্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দ্বিধা করবে না। নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়ার মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঠেকিয়ে রাখার যে চিন্তা করেছে সেটি সম্ভবত আর সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সংলাপে বিএনপির সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে সরকার কীভাবে বসবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। কেননা অন্য জোটগুলো সরকারের সঙ্গে একইভাবে বসতে চাচ্ছে। সময় সে কারণে সরকারের হাতেও বেশি নেই, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দরকষাকষি করার সময় কোথায়? তাতে যদি কোনো অচল অবস্থা তৈরি হয় সেটি কোন দিকে মোড় নিবে তাও আগে থেকে নিশ্চিত করে বলা যায় না।

২ নভেম্বর বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং ১৪ দলীয় নেতাদের সংলাপ অনেক বেশি গঠনমূলক হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। কেননা যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকর বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করলে সেগুলোর অনেক কিছুই সরকার পক্ষ যুক্তিসঙ্গত মনে করেছে। ফলে এ নিয়ে আলোচনা বেশ সিদ্ধান্তমূলক রূপলাভ করেছিল। বি চৌধুরী সংলাপ শেষে সরকার যুক্তফ্রন্টের দাবিনামা গ্রহণ করেছে সেগুলো মিডিয়ার সম্মুখে চমৎকারভাবে উপস্থাপনও করেছেন- যা করতে পারেনি ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্ট না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিএনপির মূল দাবি খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করা। যুক্তফ্রন্টের তেমন কোনো অনড় দাবি ছিল না। তবে তাদের দাবিগুলো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য বেশ প্রয়োজনীয় ছিল। সে ক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্টের সংলাপ সরকারের সঙ্গে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হয়।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে গতকাল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্য জোটগুলোর সঙ্গে ৭ তারিখের আগেই সরকারি দল এবং প্রধানমন্ত্রী সংলাপ শেষ করবেন। অন্য জোটগুলো কি কি দাবিনামা উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারবেন সেটি দেখার বিষয়। তবে অনুষ্ঠিত সংলাপের মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা এবং প্রস্তুতিহীনতা বেশ স্পষ্ট হয়েছে। মাঠে তারা যেভাবে তর্জন-গর্জন করছেন আলোচনার টেবিলে তাদের নেতাদের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এবং ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গে পেরে উঠছেন বলে মনে হয় না। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত চমৎকারভাবে সংলাপের পরিবেশকে একদিকে প্রাণবন্ত, উদার এবং গঠনমূলক করার সুযোগ দিয়েছেন অন্যদিকে প্রতিপক্ষের যুক্তি, তথ্য, ব্যাখ্যা এবং আইনি ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাতে তার দৃঢ়তা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে। এটি দেশব্যাপী সরকারের জন্য ইতিবাচক মনোজগৎ তৈরি করতে সহায়তা করেছে বলে মনে হয়। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টসহ যেসব জোট এবং দল সংবিধানকে বারবার নির্বাচনের আগে পরিবর্তনের যুক্তি দেখাচ্ছে, সেটি খুব গভীরভাবে চিন্তা করলে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কেননা সাংবিধানিকভাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিয়মে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার বিষয়টি এখন বাংলাদেশের জন্য খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা এক সময় সাবেক প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যে ধারণাটি সবার কাছে খুব চমৎকার বলে মনে হয়েছিল তিন তিনবারের অভিজ্ঞতায় সেটি আর বাস্তবে ফিরে আসার মতো অবস্থানে নেই। সর্বজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার গঠনের ধারণাও এখন অবাস্তব বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবিধানের ধারা মোতাবেক নির্বাচিত সরকারের কোনোরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে অনুষ্ঠিত করার পথেই অগ্রসর হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর সর্বত্রই নানা সীমাবদ্ধতার পরও রাজনৈতিক দল ও সরকারকেই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জটি খুব সহজ নয়, বরং বেশ কঠিন এবং সমস্যা সঙ্কুল। তারপরও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নির্বাচনে অন্য কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধায়ন খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না।

সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা হলো নির্বাচন উপলক্ষেই রাজনৈতিক দল, জোট ও সরকার সংলাপ করবে, আলোচনা করবে এটিই যেন শেষ কথা না হয়। তাহলে মনে হবে এসব সংলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে কেবলই ক্ষমতায় যাওয়া, ভোগ করা, নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নেয়া। গণতন্ত্র তাতে খুব বেশি লাভবান হওয়ার আশা করতে পারে না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল, জোট ও সরকারের মধ্যে আলোচনা ও সৌহার্দ্য আবশ্যকীয়। মূলত গণতন্ত্রের মূল আদর্শকে সব দল ও মতের মানুষকে বুঝতে দেয়া, শিখতে দেয়া এবং ধারণ করতে দেয়া। যেটি সম্ভব হতে পারে নির্বাচনের পর থেকে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত- অর্থাৎ নিরন্তর।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App