×

তথ্যপ্রযুক্তি

পরিবহন খরচ এবং যানজট কমাতে নতুন ধারণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৫৫ পিএম

পরিবহন খরচ এবং যানজট কমাতে নতুন ধারণা
প্রতি বছর ঢাকার এই জ্যামের কারণে মাথাপিছু আয় প্রায় ৬ হাজার ৫০০ টাকা কমে হচ্ছে, প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। ৭ বছর আগে ঢাকার যানজটের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা, এখন সেটা পৌঁছেছে দেড় লাখ কোটিতে! মাত্র এক যুগের ব্যবধানে গাড়ির গতি ২১ থেকে নেমে গেছে ৫ কিলোমিটারে। এই হিসাব চলতে থাকলে মাত্র ৫ বছর পরেই থমকে যাবে ঢাকা শহর, ভেঙ্গে পড়বে দেশের অর্থনীতি। অতত্রব চোখ বন্ধ করে একবার এমন ঢাকা শহরের কথা কল্পনা করুন। যেখানে নেই তীব্র ও অসহনীয় যানজট নেই। যানজট নামের যে অভিশাপ দেশের মোট জিডিপির ১০% একাই ধ্বংস করে দিচ্ছে সে শহরের যানজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। আমাদের একটু সদিচ্ছা আর নতুনকে গ্রহণ করার মানসিকতাই করতে পারে সমস্যার সমাধান। যানজট থেকে মুক্তি খুঁজতে আমরা যখন নিগাঢ় অন্ধকারে তখনই সমাধানের বার্তা নিয়ে এসেছে ‘সহযাত্রী’। নতুন এই রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা শহরের যানজটের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব বলেই মনে করছেন এ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যানজটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ভাড়ায় চলা মাইক্রোবাস-সিএনজি চালিত অটোরিকশা। অধিকাংশ সময়েই একটি গাড়ির ভেতরে বসে থাকেন একজনমাত্র যাত্রী। ঢাকা শহরের রাস্তার আয়তন সাপেক্ষে এটা নিতান্তই বিলাসিতা। এক/দুইজন যাত্রীর জন্য একেকটা গাড়ির বহর যখন রাস্তায় নামে তখন শহরের সীমিত আয়তনের রাস্তা গাড়িগুলোকে দাঁড়ানোর জায়গা দিতেই হিমশিম খায়। গাড়ি সামনে যাওয়ার সুযোগ থাকেই না। স¤প্রতি অ্যাপভিত্তিক যাত্রী সেবা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে এই চর্চা বেড়ে গেছে বহুগুণে; যানজটও তাই বাড়ছে সমানুপাতিক হারে। ‘সহযাত্রী’ কাজ করতে চায় এখানেই। আপনার যে গাড়িতে তিনটা সিট ফাঁকা পড়ে আছে সেখানে বসতে পারেন আরো তিনজন মানুষ। আপনি তিনজন বাড়তি মানুষকে সহযাত্রী করে নেয়ার মানে রাস্তা থেকে কমে যাচ্ছে তিনটি গাড়ি। যানজট এখানেই কমে যাচ্ছে ৭৫%। যদি দুইজন ভিন্ন মানুষ একটা গাড়ি শেয়ার করেন তবে যানজট কমছে ৫০%। যানজট কমে যাওয়া ছাড়া আপনার কোনো লাভ নেই? হ্যাঁ, আছে। আপনার যে ভাড়া আসবে সেটা আপনি ভাগ করে নিতে পারছেন আপনার সহযাত্রীর সঙ্গে। আপনার পরিবহন খরচ কমে যাচ্ছে ন্যূনতম অর্ধেক। সহযাত্রীর কাজ আপনি ও আপনার সহযাত্রীর মধ্যে মেলবন্ধন করে দেয়া। ঢাকা বা ঢাকার বাইরের যে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে যাচ্ছেন আপনি, সহযাত্রী কাউকে খুঁজছেন, যাত্রা শুরুর আগে সহযাত্রী অ্যাপে গিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সেটা জানিয়ে দিলেন। নিবন্ধিত অন্য কেউ একই সময়ে একই রোডে বা গন্তব্যে যাত্রা করতে ইচ্ছুক থাকলে ‘সহযাত্রী’ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আপনাদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এভাবে অপরিচিত একজন মানুষের সঙ্গে রাইড শেয়ার করা কতটা নিরাপদ? নতুন এই অ্যাপসটি সম্ভব সব ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়িয়ে আপনাকে রাইড শেয়ারের সুবিধা দিচ্ছে। একজন গ্রাহককে নিবন্ধন দেয়ার পূর্বে সহযাত্রী তিনস্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। একজন গ্রাহকের যে কোনো একটি বাস্তব পরিচয়পত্র, ঠিকানা, ফেসবুক আইডি ভেরিফিকেশন করার পর ব্যক্তি ব্যাপারে ধারণা নেয়া এবং যে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হলে যথাযত পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার পরেই আপনার সহযাত্রী তাকে হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে কোনো যাত্রা শেষে আপনার সহযাত্রীর রেটিং দিতে পারবেন আপনি। নারীদের সুবিধা এবং ইচ্ছে বিবেচনায় রয়েছে নারী সহযাত্রী বাছাইয়ের ব্যবস্থা। সহযাত্রীর তিন তরুণ বাংলাদেশি উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশ এবং মানুষের নানা রকম সমস্যা সমাধান আর মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করতে কাজ করে যাবেন তারা। সহযাত্রী যানজট প্রতিরোধে যদি মাত্র ১০% অবদান রাখতে পারে তাতেই বেঁচে যাবে বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা, প্রতিদিন যোগ হবে ৪ লাখ কর্মঘন্টা। সহযাত্রীর উদ্যোক্তারা বলেন, আমরাই রাইড শেয়ারিং কোম্পানি হিসাবে রাইড শেয়ারের মাধ্যমে ভেরিফাইড সহযাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া শেয়ার করার সুযোগ দিচ্ছি। উল্লেখ্য, এদেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার আসার পর থেকেই বদলে যায় দৃশ্যপট। ঢাকায় বেশ কিছু স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক বাহন বা যাতায়ত সেবা চালু হয়েছে। বাস আর রিকশা-অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে অনেকেই এখন এই সেবা নিচ্ছেন। তবে যানবাহন ও ভাড়া শেয়ার করার সুবিধা দেশের বাইরে উবার চালু রেখেছে। উবার পুল নামে দেশের বাইরে এই সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App