×

জাতীয়

চট্টগ্রামে কৌশলে প্রস্তুত হচ্ছে জামায়াত শিবির ক্যাডাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০১:৫৫ পিএম

চট্টগ্রামে কৌশলে প্রস্তুত হচ্ছে জামায়াত শিবির ক্যাডাররা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয়াবহ নাশকতার পরিকল্পনা করছে জামায়াত-শিবির। নির্বাচন বানচাল করতে টার্গেট কিলিং ও নাশকতা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নেমেছে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক এই সংগঠনের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর কট্টর জঙ্গিবাদী গ্রুপটি মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য তারা তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তরুণ নেতাকর্মীদের কাজে লাগাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও স্পর্শকাতর বিদ্যুৎ স্টেশনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী। নির্বাচনের আগে পুলিশের মনোবল ভাঙতে পুলিশের স্থাপনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। শনিবার রাতে নগরীর চন্দনপুরা এলাকায় নগর ছাত্রশিবির কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণের পর অভিযান চালিয়ে ৬টি ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতামূলক প্রস্তুতি নিচ্ছে এটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ব্যস্ত এখন। পাশাপাশি নানা কৌশলে অস্ত্র ও বিস্ফোরক হামলার প্রশিক্ষণ দিয়ে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা সংগঠিত হচ্ছে। সহিংসতার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা বিস্ফোরক সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান গোয়েন্দারা। প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে ২০১৪ সালে সারা দেশে ব্যাপক নাশকতা চালায় জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে এবং বিভিন্ন সময় দেশব্যাপী নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন সহিংসতা চালায় জামায়াত-শিবির। এবার তারা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতার টার্গেট করেছে। চট্টগ্রাম নগরীতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন এমন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নির্বাচনে নাশকতা চালানোর জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬টি থানা এলাকাকে ৫২টি সাংগঠনিক থানায় ভাগ করেছে ছাত্রশিবির। আটটি থানার বিপরীতে ২৬টি সাংগঠনিক থানায় ১২৯ জন করে দায়িত্বশীল নেতারা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন। মাঠে থাকবে ২০ হাজার প্রশিক্ষিত কর্মী। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে আরো ব্যাপক আকারে সহিংসতা ও নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি আছে জামায়াত-শিবিরের। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি। পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের অপতৎপরতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠীর নাশকতা মোকাবেলা করার সক্ষমতা পুলিশের আছে। তারা কী ধরনের নাশকতা করতে পারে, তাদের টার্গেট কী তা আমরা খতিয়ে দেখছি। শনিবার সন্ধ্যার পর অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ওই এলাকায় ব্লক রেইট দেয় পুলিশ। এ সময় চন্দনপুরা ডিসি রোডের আল ইসরা ভবনে শিবিরের মহানগর কার্যালয়ে চার-পাঁচটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপরই শিবির কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ছাত্রশিবিরের কার্যালয়ে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পুলিশ নগর গোয়েন্দা ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। চারতলা ভবনের প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে লালটেপ মোড়ানো ৬টি ককটেল, আড়াই লিটার অকটেন, কাঁচের টুকরো, গান পাউডারসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়। অভিযানের পর ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ভবনের পেছনে একটি গোপন পথ পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা ওই পথে পালিয়ে গেছে। সেই ভবনে শিবির পরিচালিত কোচিং সেন্টার এবং মেসও রয়েছে। এর আগেও একাধিকবার ওই ভবনে পুলিশ অভিযান চালায়। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, এসআই আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ছাত্রশিবির নগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App