×

মুক্তচিন্তা

ইভটিজিং বন্ধে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৭ পিএম

ইভটিজিং প্রতিরোধকল্পে আইন পাস হয়েছে অনেক আগেই। আইনটির প্রয়োগ কতজনের ক্ষেত্রে ঘটেছে, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। আমরা চাই, পাভেল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি পরিবারে সমাজে রাষ্ট্রে কোথাও নারী উত্ত্যক্তকারী ও নির্যাতনকারীদের প্রশ্রয় থাকা উচিত নয়।

সামাজিক ব্যাধিগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে ইভটিজিং। সরকার ইভটিজিং নামের নারী নিগ্রহ প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে ভয়াবহ এই সামাজিক ব্যাধির প্রকোপ দমানো যাচ্ছে না; ইভটিজারদের তথা বখাটে দুর্বৃত্তদের রোখা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন-আদালত থানা-পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা বরং আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত শনিবার রাতে পুরান ঢাকার জুরাইনে বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন বড় ভাই শেখ ইসলাম পাভেল। বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, তুহিন নামের এক বখাটে পাভেলের ছোট বোন তামান্নাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় সালিশও হয়েছে। কিন্তু তুহিনকে থামানো যায়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তুহিন ও তার সহযোগীরা তামান্নাকে আবারো উত্ত্যক্ত করলে পাভেল প্রতিবাদ করেন। সে সময় বখাটে তুহিন উল্টো গালিগালাজ করলে পাভেল তাকে থাপ্পড় মারেন। বখাটে তুহিন সে সময় চলে গেলেও রাত ১০টার দিকে জুরাইন বাঁশপট্টি এলাকায় সহযোগী মাসুম, রাব্বি, ইরফানসহ আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সে পাভেলকে ঘিরে ধরে। তারা পাভেলকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় পাভেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন রবিবার পাভেল মারা যান। বলতেই হবে যে, বর্তমানে সামাজিক শৃঙ্খলার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ইভটিজিং। বখাটেরা এই বেপরোয়া সাহস কোথা থেকে পায়? এ কাণ্ডটি ঘটেছে প্রকাশ্যে। এই বখাটেরা সমাজের কারো প্রতিরোধের মুখে পড়ল না কেন? এ ঘটনা কি সমাজের কাউকেই তাড়িত করেনি। সবাই কি নির্লিপ্ত? নাকি বখাটেরা এতই ক্ষমতাবান যে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কেউ সাহস পায়নি। ইভটিজিং প্রতিরোধকল্পে আইন পাস হয়েছে অনেক আগেই। আইনটির প্রয়োগ কতজনের ক্ষেত্রে ঘটেছে, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। এ ছাড়া নারীর সুরক্ষার জন্য শক্ত আইন রয়েছে। সমস্যা হলো, আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত হয় না। আবার অনেকে এসব আইনের সুরক্ষা নিতে এগিয়ে আসেন না। এর কারণ বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতা, উপযুক্ত আইনি সহায়তাদানের নিশ্চয়তা না পাওয়া ইত্যাদি। আমরা মনে করি, বখাটেদের উৎপাত বন্ধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং যথাযথ পুলিশি তৎপরতার বিকল্প নেই। অপরাধী যেই হোক, যে পরিচয়ধারীরই হোক বিধিমতো তার বিচার নিশ্চিত হতে হবে। পাভেল হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডে মাসুম, তুহিন, রাব্বি ও ইরফান নামের চার বখাটেসহ আরো কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আমরা চাই, পাভেল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি পরিবারে সমাজে রাষ্ট্রে কোথাও নারী উত্ত্যক্তকারী ও নির্যাতনকারীদের প্রশ্রয় থাকা উচিত নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App