×

পুরনো খবর

খালেদার বিকল্প চিন্তা বিএনপির, জোটের হিসাব কষবে আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:২০ পিএম

খালেদার বিকল্প চিন্তা বিএনপির, জোটের হিসাব কষবে আ.লীগ
জাতীয় সংসদের ৪১ বগুড়া-৬ (বগুড়া সদর) ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। কেননা, ১৯৯৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে (২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া) এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির ‘রিজার্ভ ভোটব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া সদর আসনটিতে বারবার খালেদা জিয়া বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে না পারলে বিকল্প চিন্তা করবে বিএনপি। অন্যদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হিসাব-নিকাশে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নুরুল ইসলাম ওমরকে ছেড়ে দিলেও এবার দলের অস্তিত্ব রক্ষায় নতুন হিসাব-নিকাশ কষছে আওয়ামী লীগ। বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও দেশের সর্ববৃহৎ ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৬ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৮৪ জন আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৫ জন। খালেদা জিয়া কোনো কারণে প্রার্থী না হলে এই আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম, বগুড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট কে এম মাহবুবার রহমান। তবে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী কে হবেন এ ব্যাপারে বিএনপি নেতারা এখনো মুখ খুলছেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মমতাজ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ নামে পরিচিত রাগিবুল আহসান রিপু, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুঞ্জুরুল আলম মোহন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীর একক তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি ও দশম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) থেকে সরকারি আযিযুল হক কলেজের সাবেক ভিপি এডভোকেট এমদাদুল হক এমদাদ প্রার্থী হতে চান। জামায়াত থেকে স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন। এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ফরিদ প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপির শক্ত ঘাঁটিতে আওয়ামী লীগ বারবার প্রার্থী পরিবর্তন করেও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। কিন্তু বিগত ১০ বছরে ক্ষমতায় থাকার সময়ে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা সরকারের উন্নয়নের চিত্র দ্বারে দ্বারে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে ভোটব্যাংক থাকলেও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে রয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম ওমর এলাকায় সময় দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন ও গণসংযোগ করেছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও এবার তিনি মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থিতা ছাড় নাও দিতে পারে। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া সফর করে তার প্রতিশ্রæদ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করায় এবং দলের সাংগঠনিক দৃঢ়তায় বগুড়ায় নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, ধানের শীষের প্রার্থী খালেদা জিয়া কিংবা যেই হোক না কেন তার বিজয় সুনিশ্চিত। কেননা, বগুড়ার জনগণ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষকে বিপুল ভোট দেয়ার মাধ্যমে আবারো বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করে ভালোবাসার প্রমাণ দেবে। আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাবে দেখা যায়, বগুড়া সদর আসনে ১৯৯১ সালে দলীয় প্রার্থী মমতাজ উদ্দিন পান ২৭ হাজার ৯৬৪ ভোট, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদুল হাসান পান ৩৬ হাজার ৭৪৭ ভোট, ২০০১ সালে দলের মাহবুবুল আলম টুকুন পান ৫৪ হাজার ৭৭৭ ভোট, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মমতাজ উদ্দিন পান ৭৪ হাজার ৬৩৪ ভোট। কিন্তু এ নির্বাচনে খালেদা জিয়া পান ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৩ ভোট। আওয়ামী লীগের ভোটের অঙ্ক দিন দিন বাড়লেও তা কতখানি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে তা ফুটে উঠবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ্লেষকদের ধারণা। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে সর্বমোট ১৪১টি ভোটকেন্দ্রের ৭২৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এই আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন হাশেম আলী খান এলএলবি। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে এস এম ফারুক, ১৯৮৬ মাওলানা আব্দুর রহমান ফকির, ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী মজিবর রহমান ও ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রথম বারের মতো খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনেও খালেদা জিয়া এ আসনে জয়ী হন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত নুরুল ইসলাম ওমর নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App