×

মুক্তচিন্তা

৪ নেতার আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হোক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:০২ পিএম

এটি স্পষ্ট যে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার নেতার হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই কেবল গুটিকতক অস্ত্রধারীর কাজ নয়, এটি ছিল জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে, দেশকে মুক্তি সংগ্রামের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে স্বাধীনতার শত্রুদের ঘোরতর ষড়যন্ত্রের অংশ। আপিল রায়েও এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ জাতির সামনে পুরোপুরি উন্মোচিত হওয়া, ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হওয়াও জরুরি।

আজ জেলহত্যা দিবস। জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতা- স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান। বঙ্গবন্ধু হত্যাণ্ডপরবর্তী দখলদার চক্রান্তকারী অশুভ রাজনৈতিক শক্তির প্ররোচনায় কিছু সেনাসদস্য রাষ্ট্রের সুরক্ষিত স্থান হিসেবে বিবেচিত কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার সুপরিকল্পিত ও সুগভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। আজ এ দিনে আমরা জাতীয় এ চার নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাণ্ডপরবর্তী দখলদার রাজনৈতিক শক্তির প্ররোচনায়ই যে কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, তা বোঝা গিয়েছিল তখনকার ক্ষমতাসীনদের আচরণেই। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নেয়া তো দূরের কথা, আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। হন্তারকদের বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশে নিরাপদ অবস্থানের ব্যবস্থা করে, কাউকে কাউকে মর্যাদাপূর্ণ চাকরি দিয়েও পুরস্কৃত করেছে পরবর্তী সরকারগুলো। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচারকাজ শুরু করে। পরবর্তী সময় বিচারকাজ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। ২৯ বছর পর ২০০৪-এর ২০ অক্টোবর অভিযুক্তদের মধ্যে পলাতক ৩ জনের ফাঁসি, জেলে অবস্থানরত ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জামিনে মুক্তদের নির্দোষ ঘোষণা করে বিচারিক আদালত দায়সারা একটি রায় দেয়। রায়ে এত বড় একটি ঘটনায় ষড়যন্ত্রীদের শাস্তির আওতায় না আসাও জাতিকে বিস্মিত করে। পরে ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামিকে বেকসুর খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে চারজনকে দণ্ড থেকে অব্যাহতি দেন। এ রায় জাতিকে আরো স্তম্ভিত ও মর্মাহত করে। আত্মস্বীকৃত মূল আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে এটা কারো কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। বিস্ময়করভাবে তখন রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেনি। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রত্যাশিত আপিল দায়ের করা হয়। আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ ২০১৬ সালে ৩০ এপ্রিল রায় দেন। হাইকোর্টের রায়টি বাতিল করে বিচারিক আদালতের রায়ই বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। জেলহত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিনজন আসামিই বর্তমানে পলাতক রয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। এখন প্রশাসনের দায় পলাতক দণ্ডিত আসামিদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা।

দীর্ঘ ৩৯ বছর পর হলেও জেলহত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হওয়া অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আক্ষেপের কথা হলো এত বড় হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তকারী রাজনৈতিক শক্তি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল। এটি স্পষ্ট যে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার নেতার হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই কেবল গুটিকতক অস্ত্রধারীর কাজ নয়, এটি ছিল জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে, দেশকে মুক্তি সংগ্রামের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে স্বাধীনতার শত্রুদের ঘোরতর ষড়যন্ত্রের অংশ। আপিল রায়েও এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ জাতির সামনে পুরোপুরি উন্মোচিত হওয়া, ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হওয়াও জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App