×

পুরনো খবর

জোট শরিকদেরই ছাড় দিতে পারে বড় দুদল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:১৫ পিএম

জোট শরিকদেরই ছাড় দিতে পারে বড় দুদল
জাতীয় সংসদের বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ ) আসনটি বরাবরই বিএনপি ও জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনে ১৯৭৩ সালে আ.লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলেও এরপর আর কোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। আ.লীগ ছেড়ে দেয়ায় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জোটের শরিকদের আসনটিতে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। শিবগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৩ আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫১৪ জন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন, শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.লীগ নেতা সাংবাদিক তৌহিদুর রহমান মানিক, জেলা আ.লীগ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম ফকির, জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক ডা. রেজাউল করিম জুয়েল, উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা ও সাবেক কৃষক লীগ নেতা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট আব্দুল মোত্তালেব। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি এডভোকেট এ কে এম হাফিজুর রহমান, বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম এবং এম আর ইসলাম স্বাধীন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন চাইছেন একমাত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ। মহাজোটের হিসাব-নিকাশে এবারো তিনি নৌকা প্রতীক পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক আ.লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না হতে পারেন ধানের শীষের কান্ডারি। জামায়াত থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী (স্বতন্ত্র) হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহাদতুজ্জামান ও শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নসর মো. আলমগীর হোসাইন। আসনটি ভৌগোলিক দিক থেকে রংপুর বিভাগসংলগ্ন হওয়ায় এখানে বইছে এরশাদের জাতীয় পার্টির হাওয়া। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এই আসনটিতে বাংলাদেশ আমলে একবার ছাড়া নৌকার বিজয় হয়নি। বিগত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় দলীয় কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি গোছানোর কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে এবারো নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন জাপার এই ভাইস চেয়ারম্যান। অন্যদিকে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। মাহমুদুর রহমান মান্নার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। তিনি ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি বাসদ থেকে এ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দুবার নির্বাচন করে কোনোবারই জয়ের মুখ দেখতে পাননি। এবার ধানের শীষ প্রতীক পেলে তার ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়তেও পারে। একসময়ের মুসলিম লীগ অধ্যুষিত এলাকাটি বর্তমানেও জামায়াত ও বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনে সর্বমোট ১১০টি ভোটকেন্দ্রের ৫৬১টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন মোজাফফর হোসেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টি থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দ মাশকুরুল চৌধুরী, ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাফফর হোসেন ও ১৯৮৮ সালে সৈয়দ মাশকরুল চৌধুরী, ১৯৯১ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জামায়াত নেতা মো. শাহাদুজ্জামান ও ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে রেজাউল বারী ডিনা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ কে এম হাফিজুর রহমান মহাজোট প্রার্থী শরীফুল ইসলাম জিন্নাহকে পরাজিত করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App