×

মুক্তচিন্তা

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ আশা জাগানিয়া

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১০ পিএম

বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা ও গতি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান আমরা আশা করতেই পারি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা আমদানি সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রতিফলন দেখতে চাই আমরা। সব ক্ষেত্রে যাতে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পায় সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। বর্তমান সরকারের কাছে এটি চ্যালেঞ্জও ছিল বটে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি বাসভবন গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ১০২ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। ইতোপূর্বে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে ৮০টি উপজেলা। আগামী এক বছরের মধ্যে ২৭৮ উপজেলা শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসছে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট না হলেও বাস্তবতার নিরিখে এ অগ্রগতি আশা জাগানিয়া।

জানা যায়, ২০০৯ সালে সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। বিগত ১০ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৪ গুণের বেশি বেড়ে বর্তমানে ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৬৫৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে। এর পাশাপাশি ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৪৬১ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ২০ হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিকল্পনাধীন আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশের মোট ৮৪ হাজার ১৫৯ গ্রামের মধ্যে ৬০ হাজার ২৪৪ গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। আংশিক বিদ্যুতায়ন হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৬৪৭ গ্রাম। খুব শিগগিরই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে এমন গ্রাম রয়েছে ৭ হাজার ৯২৮। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৭১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ভৌগোলিক এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। আর যেসব এলাকায় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব নয়, সেখানে সরকার সোলার বা সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে। সরকার নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর সুফল দেখা যাচ্ছে। তারপরও বাস্তবতা হলো, লোডশেডিং নিয়ে মানুষের ভোগান্তি একেবারে দূর হয়নি। শহরে সমস্যাটা প্রকট না হলেও গ্রামের পরিস্থিতি স্থান বিশেষে নাজুক। আবার শিল্প কারখানায়ও চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য জ্বালানির সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে ব্যবহার করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। শুরু থেকেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বড় অংশ তেলনির্ভর। অথচ এখন বিশ্বে জ্বালানি তেল দুর্মূল্য। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে আমদানিসহ নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে জরুরিভিত্তিতে চাহিদা মেটাতে গিয়ে সরকারের নেয়া কিছু ব্যবস্থা বিরূপ সমালোচনারও খোরাক হয়েছে। তবে ব্যয়সাশ্রয়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের মনোযোগ সময়োপযোগী। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা ও গতি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান আমরা আশা করতেই পারি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা আমদানি সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রতিফলন দেখতে চাই আমরা। সব ক্ষেত্রে যাতে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পায় সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যুৎ গ্রাম-শহর ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার কাছে পৌঁছুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App