×

মুক্তচিন্তা

কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ কার্যকর হোক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩৩ পিএম

আকাশ-সংস্কৃতির কল্যাণে জেএসসি, এসএসসি-এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে। এটা বাংলাদেশের জন্য এক অশনি সংকেত। সন্তানদের উচ্চ রেজাল্টের আশায় প্রশ্নফাঁসকারী দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়েন এক শ্রেণির নৈতিকতাহীন অভিভাবকও। এই ক্ষেত্রে কিছু অভিভাবকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হলে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব।

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে আজ থেকে। এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। গত বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২০ জন। এবার ২ লাখ ১ হাজার ৫১৩ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। তাদের পরীক্ষা নির্বিঘ্ন ও ভালো হোক- এমনই প্রত্যাশা করছি। গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, সারাদেশে মোট ২ হাজার ৯০৩টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৩৪টি। সেই হিসাবে এবার ৬৯টি কেন্দ্র বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও এবার দেশের বাইরে ৯টি কেন্দ্রে ৫৭৮ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে আগেই একাধিক প্রশ্ন সেট পাঠানো হবে, তবে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে প্রশ্ন নির্বাচন করে প্রশ্নপত্রের খাম খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কা থাকে। তাই পরীক্ষা চলাকালে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে উদ্যোগগুলো ইতিবাচক মনে হলেও কতটুকু কার্যকর হবে সেটা দেখার বিষয়। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁসের চিত্র দেখে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। দেশে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন সাধারণ ঘটনা। এর আগে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি, এসএসসি ও এইচএসসি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। তা সত্ত্বেও প্রতিবারই প্রতি পরীক্ষায় নতুন নতুন কৌশলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ এখানেই। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে শিশু পরীক্ষার্থীদের ওপর, এমনকি তাদের অভিভাবকদের ওপর। এর মধ্য দিয়ে শিশু শিক্ষার্থী এবং এই সমাজ একটি অশুভ ও অনৈতিক পথের সঙ্গে পরিচিত হবে।

শিক্ষিত মানুষই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেয়। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় বাংলাদেশে বিপর্যস্ত। প্রশ্নফাঁস, ভর্তি বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা। আকাশ-সংস্কৃতির কল্যাণে জেএসসি, এসএসসি-এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে। এটা বাংলাদেশের জন্য এক অশনি সংকেত। সন্তানদের উচ্চ রেজাল্টের আশায় প্রশ্নফাঁসকারী দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়েন এক শ্রেণির নৈতিকতাহীন অভিভাবকও। এই ক্ষেত্রে কিছু অভিভাবকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হলে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার বিষয়ে শিখন ও প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App