×

মুক্তচিন্তা

জঙ্গি অর্থায়ন উৎস বন্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০০ পিএম

সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সারা দেশে জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ খুব ত্বরান্বিত হয়েছে বলে বলা যাবে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। জঙ্গিদের মূলোৎপাটনে তাদের অর্থের জোগানদাতা ও মদদদাতাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়েছে বলা যাবে না। এ সব কর্মকাণ্ডে অব্যাহত রয়েছে অর্থায়ন। দেশি ও বিদেশি উভয় উৎস থেকেই এ সব অর্থায়ন হচ্ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা। এনজিওর মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন ও অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচিত হচ্ছে। এটা স্বীকৃত যে, জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে এর পেছনে অর্থায়ন।

সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধে সরকার ২০০২ সাল থেকে কাজ শুরু করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। ব্যাংকিং চ্যানেলে জঙ্গি অর্থায়ন যাতে না হতে পারে তার জন্য কঠোর বিধিবিধান জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (এফআইইউ)। এর মাধ্যমে ৫৭টি দেশের সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে র‌্যাব, সিআইডি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে একাধিক আইনও। এত কিছুর পরও কি জঙ্গি অর্থায়ন কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে? গত রবিবার গ্রেপ্তারকৃত ৮ জন বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতি, নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন এবং নবকৃষি প্রাইভেট লিমিটেড নামের ৩টি এনজিওর সঙ্গে যুক্ত। পরদিন সোমবার সিআইডি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নিজেদের রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা, অর্থ আত্মসাৎসহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন করে আসছে। ২০০৭ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে বিদেশি অনুদান হিসেবে মোট ৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আসে। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অবস্থায় ২০১৪ সালে মারা যাওয়া মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ। সিআইডি তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে আরো জানতে পেরেছে, কক্সবাজার-২ আসনের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদের নির্দেশে বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্ট থেকে ৪২ লাখ টাকা নবকৃষি প্রাইভেট লিমিটেডে স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে গত বছরের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ চাষি কল্যাণ সমিতি থেকে নবকৃষি প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে আরো ১০ লাখ টাকা স্থানান্তর করে। জঙ্গি অর্থায়ন প্রসঙ্গে আলোচনায় এসেছে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সারা দেশে জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ খুব ত্বরান্বিত হয়েছে বলে বলা যাবে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। জঙ্গিদের মূলোৎপাটনে তাদের অর্থের জোগানদাতা ও মদদদাতাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ হলে এদের তৎপরতাও কমে যাবে। এজন্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রগুলোকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App