×

মুক্তচিন্তা

পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৫ পিএম

স্বভাবতই প্রশ্ন সামনে আসে, কেউ অপরাধ করলে তাকে কি শাস্তি দেয়া যাবে না? আইন-আদালত-প্রশাসনকে অবজ্ঞা করে চালিত পরিবহন খাতে এমন নৈরাজ্য সমাজব্যবস্থায় একটি মারাত্মক হুমকি। চালকরা আর চালক থাকবেন না, খুনের লাইসেন্সধারীতে পরিণত হয়ে চরম বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবেন। যেভাবেই হোক, দেশের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতেই হবে।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার শ্রমিক ধর্মঘটে রাস্তায় মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। ২৮ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে আট দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা রবিবার ও সোমবার এ ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অফিস কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে। পরিবহন শ্রমিকরা আইন সংশোধনের অজুহাতে যে নৈরাজ্য করছেন তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এতে স্বভাবতই প্রশ্ন সামনে আসে, পরিবহন শ্রমিকরা এই ঔদ্ধত্য ও সাহস কোথায় পায়? এই ব্যাপারে বিআরটির ভূমিকা কী তাও সামনে প্রশ্ন আসছে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাস চাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করে। কিন্তু ওই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সেগুলো বাতিল করার দাবি তুলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা, ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ওয়ে স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা। এসব দাবিতে গত রবিবার সকাল থেকে সারা দেশে দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে নগর পরিবহন বন্ধ রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্মঘটের নামে পরিবহন খাতে এমন নৈরাজ্য নতুন কিছু নয়। দিনদিন পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কোনোভাবেই যেন তাদের দমন করা যাচ্ছে না। যে কোনো ইস্যু নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে পড়েন। ভাবতে অবাক লাগে যে, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষ আছেন। কিন্তু তাদের চোখের সম্মুখেই চলছে বাসে বাসে রেষারেষি, প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা। সে সঙ্গে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের দাপট তো আছেই। আর এই বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার তো পাচ্ছেন না, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন সামনে আসে, কেউ অপরাধ করলে তাকে কি শাস্তি দেয়া যাবে না? আইন-আদালত-প্রশাসনকে অবজ্ঞা করে চালিত পরিবহন খাতে এমন নৈরাজ্য সমাজব্যবস্থায় একটি মারাত্মক হুমকি। চালকরা আর চালক থাকবেন না, খুনের লাইসেন্সধারীতে পরিণত হয়ে চরম বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবেন। যেভাবেই হোক, দেশের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতেই হবে। নতুন আইন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বাস শ্রমিক-মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তবে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে যেগুলো বাস্তবসম্মত সেগুলো সরকারের বিবেচনায় আসা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App