×

পুরনো খবর

জয় অব্যাহত চায় আ.লীগ জোটেই ভরসা বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০১:০৯ পিএম

জয় অব্যাহত চায় আ.লীগ জোটেই ভরসা বিএনপির
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ আসনে জয় অব্যাহত রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর আসনটি কব্জায় নেয়ার চেষ্টা বিএনপির। এ ক্ষেত্রে জোটবদ্ধ নির্বাচনেই ভরসা বিএনপির। একটি পৌরসভাসহ মোংলা ও রামপাল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে স্বাধীনতার পর সাংসদ নির্বাচিত হন ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের কুবের চন্দ্র বিশ্বাস, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আফতাব উদ্দিন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির আফতাব উদ্দিন হাওলাদার ও ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির এ ই ইউ আহমেদ, একই বছরের ১২ জুন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক, ২০০১ সালেও তালুকদার আবদুল খালেক, ২০০৮ সালে তালুকদার আবদুল খালেক খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকায় তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার জামায়াত নেতা আবদুল ওয়াদুদকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক পুনরায় নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তালুকদার আবদুল খালেক সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে উপনির্বাচনে তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের আইন উপকমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ওবায়দুর রহমান ওবায়েদ। তিনি রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদুল ওহাবের ছেলে। এ ছাড়া রয়েছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবু হানিফ এবং চিত্রনায়ক শাকিল খান। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির অপর সহসভাপতি সরদার মো. অজিয়ার রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট জেলা ২০ দলীয় আন্দোলন-সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আলী রেজা বাবু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামিম ও জামায়াত নেতা শেখ আবদুল ওয়াদুদ। রামপাল-মোংলার উন্নয়নের রূপকার দাবিদার হাবিবুন্নাহার তালুকদার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যা উন্নয়ন হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মৃত মোংলাবন্দর এখন কর্মচঞ্চল লাভবান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ভরাট হয়ে বন্ধ হওয়া মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ চ্যানেল খনন, সাইলো নির্মাণ, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন, খুলনা-মোংলা রেললাইন, খানজাহান আলী পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে রামপালে কয়লাভিত্তিক আধুনিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইপিজেড, অর্থনৈতিক জোনসহ অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প এবং এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, ভ‚মিহীনদের ভ‚মিদানসহ সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি বলেন, নেত্রী আমাদের ১৯৯১ সাল থেকে ৬ বার মনোনয়ন দিয়েছেন, আমরা ৬ বার জয়ী হয়েছি। এবারো মনোনয়ন দেবেন আশা করি, মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হব । এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, এ আসনে হাবিবুন্নাহার তালুকদারের বিকল্প কেউ নেই। জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের আমলের মোংলা-রামপালের সন্ত্রাসের জনপদ আর নেই। ৯ বছরে কোনো জমি ও মৎস্য ঘের দখল নিয়ে মারামারি, খুনাখুনি নেই, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজিও নেই। এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান ওবায়েদ বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাঙ্গে জড়িত। আমি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে আছি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের আইন উপকমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি দীর্ঘদিন ধরে রামপাল-মোংলা এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল নির্বাচনে আমাকে যোগ্য মনে করলে মনোনয়ন দেবে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে কাজ করব। এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ও খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবু হানিফ বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এই দুই উপজেলার গণমানুষের জন্য কাজ করছি। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে উপনির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মনোনয়ন পাইনি, তবে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। দল আমাকে যোগ্য মনে করলে মনোনয়ন দেবে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে কাজ করব। অপর প্রার্থী চিত্রনায়ক শাকিল খান বলেন, আমি রামপাল ও মোংলা উপজেলায় দীর্ঘ দিন ধরে গণমানুষের জন্য কাজ করছি। আমি রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের সন্তান। আমার দাদা ছিলেন একজন চিকিৎসক, বাবা এম এ মতিন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি চট্টগ্রাম সরকারি ওমর গনী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত জিএস ছিলাম। ১৭ বছর ধরে চলচিত্র জগতে ছিলাম। আমি ১৭৬টি ছবিতে কাজ করেছি। ৩টি জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পেয়েছি। ভারতে রাজা-বাদশা ছবিতে পুরস্কার পেয়েছি। আমি আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি। আমি উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। নেত্রী আমাকে বলেছেন পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে। তাই আমি কাজ করছি। সালাম মোর্শেদী ভাই ও মমতাজ আপা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে আমিও পাব বলে শতভাগ আশাবাদী। এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা কমিটির সহসভাপতি ও সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ৯০ এ স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। ১/১১ পর থেকে মিথ্যা মামলার শিকার বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচারণা চালাছি। এখানে জোটের মনোনয়ন পেয়ে জামায়াত বারবার পারাজিত হচ্ছে। আমি রামপাল ও মোংলায় বিনামূল্যে ৪ সহ¯্রাধিক রোগীর চোখের অপারেশনের ব্যবস্থা করেছি। আমাকে দল মনোনায়ন দিলে বিজয়ী হব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট জেলা ২০ দলীয় আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান আলী রেজা বাবু বলেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে অন্য প্রার্থীর চেয়ে আমি অনেক বেশি পরীক্ষিত। এ আসনে বিএনপি-জামায়াতের রয়েছে শক্ত অবস্থান। আমি দীর্ঘদিন রামপাল-মোংলা উপজেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে আছি। এখানে দলের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত মজবুত। আমি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ঘাড়ে ৭টি নাশকতার মামলা রয়েছে। এখানে জোটের প্রার্থী জামায়াত বারবার পরাজিত হওয়ার কারণে আমি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাব। দল নির্বাচনে গেলে আর নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাগেরহাট-৩ আসনে আমি জয়ী হব আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App