×

মুক্তচিন্তা

মহাসড়কে আর কত লাশ দেখতে হবে?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০২ পিএম

পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতিরও লাগাম টানা হচ্ছে না। গাড়ির ফিটনেস প্রদান, চালকের লাইসেন্স প্রদান, সড়কে নজরদারি সব কিছুতেই রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টরা কিছুটা নড়েচড়ে ওঠেন, তারপর আবার চিরাচরিত শৈথিল্য। এভাবে আর কতদিন? যত দিন আমরা সততা, সদিচ্ছা, দায়বোধ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে না নামব, তত দিন সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে না।

পঞ্চগড়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৯ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। গত শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের দশমাইল এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। সারা দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার খবর আমরা দেখছি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যমের দখলে মহাসড়ক। এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহু স্থানে সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশা, বিপজ্জনক মোড় বহাল রাখা, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের সড়কে নামা, চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় না আনা, সচেতনতামূলক কর্মসূচির অনুপস্থিতি, মানুষ হত্যা করেও চালকদের পার পেয়ে যাওয়া- এসব কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। আর যা ঘটছে তার সবই কি দুর্ঘটনা? প্রতিরোধযোগ্য হওয়ার পরও যদি আমরা উদাসীন থাকি, কাক্সিক্ষত নীতি প্রণয়ন করে না এগোই, লাইসেন্সবিহীন সহকারীর হাতে তুলে দেই স্টিয়ারিং, তাহলে একে কি হত্যাকা- বলা যায় না? উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ সঠিক নীতি ও কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমিয়ে আনতে পেরেছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্ধেক দেশ পর্যায়ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে; কিন্তু বেড়েছে বাকি ৫০ শতাংশ দেশে- যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এই ব্যর্থতার দায়ভার মেনে নিয়ে আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেই, পরিস্থিতি সামনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।

সরকারি হিসাবে অবশ্য গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে, কিন্তু বাস্তবতা তা বলে না। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ বাড়তি দায়িত্ব এড়ানোর জন্য দুর্ঘটনার হিসাব রেকর্ডভুক্ত করে না। এভাবে উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে রেখে হিসাব কমিয়ে রাখলে সমস্যার তীব্রতা কমে যাবে না। সদিচ্ছা থাকলে অর্থ ব্যয় না করেই ২৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। এ জন্য ট্রাকের কাঠামো পরিবর্তন, মহাসড়কের সঠিক স্থানে ট্রাফিক সাইন স্থাপনসহ ছোট ছোট কিছু কাজ করতে হবে। বাকিটার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা ও বিনিয়োগ কোনোটিই নেই। দীর্ঘদিনের নাগরিক দাবি আইন সংশোধন করে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের শাস্তি বাড়ানোর। সেই আইনও পাস হলো। কিন্তু প্রতিকার কি দেখছি? বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) দুর্ঘটনাপ্রবণ ২১৬টি স্থান নির্ধারণ করে প্রতিকারের সুপারিশ করেছে। তা কি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হয়েছেন? এ ক্ষেত্রে বিআরটিএর ভূমিকা জরুরি। কিন্তু বিআরটিএর বিরুদ্ধে রয়েছে ভূরিভূরি অভিযোগ। পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতিরও লাগাম টানা হচ্ছে না। গাড়ির ফিটনেস প্রদান, চালকের লাইসেন্স প্রদান, সড়কে নজরদারি সব কিছুতেই রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টরা কিছুটা নড়েচড়ে ওঠেন, তারপর আবার চিরাচরিত শৈথিল্য। এভাবে আর কতদিন? যত দিন আমরা সততা, সদিচ্ছা, দায়বোধ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে না নামব, তত দিন সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App