সিনেমায় সুন্দরীরা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ০২:১৩ পিএম
সুন্দরী প্রতিযোগিতা লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার থেকে সিনেমা পেয়েছে একঝাঁক নায়িকা। সুন্দরী খোঁজার অন্য প্রতিযোগিতাগুলো থেকে সিনেমার প্রাপ্তিযোগ অল্প হলেও প্রত্যাশা ফুরিয়ে যায়নি। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ আয়োজনের প্রতি দর্শক-জনতার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সিনেমায় সুন্দরীরা কতটা সফলতা অর্জন করতে পারছেন, সেটাই এই প্রতিবেদনের বিষয়। লিখেছেন স্বাক্ষর শওকতবাণিজ্যিক ছবির জগতে বিদ্যা সিনহা মিমের নামটিই সর্বাধিক উচ্চারিত। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন মিম ২০০৯ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এফডিসিতে বিচরণ শুরু করেন। কিন্তু তার প্রথম ছবি ছিল হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘আমার আছে জল’। এক দশকের বেশি সময়ে পথচলা পেরিয়ে মিম এখন বাণিজ্যিক ছবির দৌড়ে একজন সামনের সারির নায়িকা। যৌথ প্রযোজনার মধ্য দিয়ে কলকাতায় প্রবেশ করেছেন মিম। দুই বাংলা মিলিয়ে মিমের নামটি নায়িকা হিসেবে রয়েছে আলোচনায়। বাণিজ্যিক ছবিতে তেমন সুবিধা না করতে পারলেও স্বীকৃতি ও আলোচনায় জাকিয়া বারী মম অনেকখানি এগিয়ে আছেন। প্রথম ছবি তৌকির আহমদে পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপে’ অভিনয় করে মম জিতেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বছর তিনেক আগে মম বক্স অফিসের আকাক্সিক্ষত হয়ে জায়েদ খানের বিপরীতে ‘প্রেম করব তোমার সাথে’ ছবিতে অভিনয় করেন। সর্বশেষ মমকে চলতি বছর অরুন চৌধুরী পরিচালিত ‘আলতাবানু’ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছে। এরপরই বলতে হয় আফসান আরা বিন্দুর কথা। প্রয়াত পরিচালক পি এ কাজল পরিচালিত ‘পিরিতির আগুন জ¦লে দ্বিগুণ’ ছবিতে অভিষেক হয়ে আলোচিত হয়েছিলেন বিন্দু। সোহলে আরমান পরিচালিত ‘এই তো প্রেম’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন বিন্দু। কিন্তু ছবিটি দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে প্রত্যাশিত সাফল্য পেতে ব্যর্থ হয়। বিন্দু প্রবাসী হয়ে এখন অভিনয় জগত থেকেই নির্বাসিত। অপর্ণা ঘোষ মম-মিমদের অনেক পরে সিনেমায় এসেছেন। বাণিজ্যিক ছবিতেও তাকে সরব দেখা যায়নি। তিনি ভিন্নধর্মী ছবির প্রতি নিজের আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই উৎসাহ তাকে এনে দিয়েছে পার্শ্ব অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘মৃত্তিকা মায়া’ সিনেমায় অপর্ণাকে শক্ত মাটিতে দাঁড় করিয়েছে। প্রসূন রহমান পরিচালিত ‘সুতপার ঠিকানা’ ছবিতেও অপর্ণার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। ২০০৬ সালের ব্যাচের লাক্স সুন্দরী আজমেরী হক বাঁধন। মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত ‘গহীন অরণ্যে’ অভিষেক হয়েছিল বাঁধনের। তার বিপরীতে ছিলেন বাঁধন। যুগ পেরিয়ে গত বছর হুট করেই বাঁধন আসেন আলোচনায়। রায়হান রাফি পরিচালিত ‘দহন’-এ যুক্ত হতে হতেও শেষ পর্যন্ত তিনি সরে যান। তার জায়গায় আসেন মম। কিন্তু মাঝের সময়টাতে বাঁধনকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে হৈচৈ বেঁধে যায়। প্রজেক্টটি শিকে না ছেঁড়ায় বাঁধনের সিনেমা ক্যারিয়ায় আর কখনো চাঙ্গা হবে কিনা তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়। লাক্স তারকাদের মধ্যে টিভিতে একজন দাপুটে অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। কিন্তু সিনেমায় তার কতটা ছড়াতে পেরেছেন মৌসুমী? অনন্য মামুনের ‘ব্ল্যাকমেইল’ এবং সাফিউদ্দিন সাফির ‘ব্ল্যাকমানি’ কি মৌসুমীর নাম উজ্জল করতে পেরেছে? ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মৌসুমী বাণিজ্যিক সিনেমায় নেমে শরীর প্রদর্শনীর বাইরে কিছুই করতে পারেননি। তানজিকা একটা সময় আলোচিত ছিলেন। কিন্তু এখন তার নাম খুব একটা শোনা যায় না। কিন্তু তিনিও সিনেমায় পা রেখেছিলেন। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘বকুল ফুলের মালা’ ছবিতে তানজিকা অভিনয় করেছিলেন রিয়াজের বিপরীতে। ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছিল চ্যানেল আইতে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ছিল ছবিটির প্রযোজক। ইমপ্রেসের প্রযোজনায় লাক্স তারকা চৈতিও অভিনয় করেছিলেন রিয়াজের বিপরীতে তার প্রথম ছবিতে। শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত ‘মধুমতী’ ছবিটিরও প্রিমিয়ার হয়েছিল চ্যানেল আইতে। চৈতিও ছবির নায়িকা হয়েছিলেন লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতার বিজয়ী হিসেবেই। আরা বাকিরা নিজের যোগ্যতাতেই বিভিন্ন ছবিতে যুক্ত হয়েছেন। লাক্স তারকা নাজিফা তুষি যেমন প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘আইসক্রিম’ ছবিতে। তাকে নিয়ে ছবি মুক্তির আগে বেশ হৈচৈ হয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি আর নতুন কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেননি। লাক্স সুন্দরী প্রসূন আজাদ কাজী হায়াত পরিচালিত ‘সর্বনাশা ইয়াবা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ওটাই ছিল তার প্রথম ছবি। পরে দু’তিনটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। কিন্তু টিভি ক্যারিয়ারের মতো এখানেও তিনি গুছিয়ে নিতে পারেননি। একই পরিচালকের আরেকটি ছবিতে অভিষেক ঘটে লাক্স সুন্দরী অরিনের। প্রসূনের মতো তিনিও কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করেন। মারুফ-অরিনের প্রথম ছবিটি ছিল ‘ছিন্নমূল’। ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। আইটেম কন্যা হিসেবে এখন সুপরিচিত বিপাশা কবির। অনেকেই ভুলে যান তিনিও এসেছেন লাক্স প্রতিযোগিতা থেকে। বিপাশা প্রথম আইটেম সং করেন শাহিন সুমন পরিচালিত ‘ভালোবাসার রং’ ছবিতে। নায়িকা হিসেবেও পরে ব্রেক পেয়েছেন বিপাশা। কিন্তু নায়িকা পরিচয়টি তার পাশে দাঁড়ায়নি। লাক্স চ্যানেল আই সুপরস্টার প্রতিযোগিতার আয়োজক চ্যানেল আই ভিট-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরেকটি প্রতিযোগিতা করেছে। সেখান থেকে একজন নায়িকা পেয়েছে ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু সানজিদা তন্ময় বাণিজ্যিক ছবিতে সুবিধা করে উঠতে পারেননি। তিনি ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ ছবিতে নিজের অভিষেক ঘটিয়েছিলেন। গত বছর থেকে আলোচনায় এসেছে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা। জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। সেই প্রতিযোগিতা নিয়ে নাটকীয়তার কোনো কমতি ছিল না। বিজয়ী হওয়ার পর শোনা গিয়েছিল এভ্রিল সিনেমায় আসছেন। তাও শাকিব খানের বিপরীতে। এভ্রিল নিজেই এমন চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত এভ্রিলের কথা বাস্তবে ফলেনি। এ বছর এই প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। তাকে নিয়েও আলোচনা বেশ। মিস বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা থেকে নায়িকা বেরিয়ে আসার প্রত্যাশা দর্শকরা করতেই পারেন। কিন্তু দর্শকদের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মিলবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।