×

মুক্তচিন্তা

চীনের আশ্বাসের প্রতিফলন চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৪ পিএম

মিয়ানমারের সঙ্গে সব চেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে চীনের। ভারতের সঙ্গেও মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। ভারত এবং চীন এই উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এ দুটি দেশ বাংলাদেশের সমস্যার বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবে এবং এই সংকট সমাধানে দেশ দুটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছে চীন। সফররত চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ঝাও কেঝি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চীনের এ মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। বাস্তুচ্যুতদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার দাবির সমর্থনে চীনা মন্ত্রীর বক্তব্য ইতিবাচক।

শুধু সমর্থন নয়, এই দাবি বাস্তবায়নে প্রতিবেশী দেশ ও বৃহৎ শক্তি হিসেবে চীনের সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করি আমরা।

গত শুক্রবার সচিবালয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নিরাপত্তাবিষয়ক তিনটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে বেরিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গা, ভিসা, জননিরাপত্তা, আঞ্চলিক শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

এসব বিষয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনেও রাজি হয়েছে দুই দেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের নাগরিকদের দ্রুত সময়ে দেশে ফিরিয়ে দিতে চীনকে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

চীনও স্বীকার করেছেন, মিয়ানমারের ১ মিলিয়ন নাগরিক এখানে থাকায় বাংলাদেশ সমস্যায় পড়েছে। স্বল্পসময়ে এতসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেয়ায় তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

বলা হয়েছে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া চুক্তিগুলো যেন মিয়ানমার যথাযথভাবে পালন করে, সে বিষয়েও কার্যকর উদ্যোগ নেবে চীন।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিষ্পেষণ চলে আসছে কয়েক দশক ধরে। সর্বশেষ গত বছর ২৫ আগস্টের সেনা অভিযানের মুখে সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ করে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

এর আগে থেকেই কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত। রোহিঙ্গাদের এমন মানবিক বিপর্যয়ে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংঘ, সংস্থা এবং বিশ্বের বহু দেশ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায়। বাংলাদেশ মানবিক কারণে এদের আশ্রয় দিয়েছে, যদিও আশ্রিতের চাপ বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের বিরূপ প্রভাব ফেলার ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের এই বড় সংকটের সময়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুপ্রতিম দেশ চীন সেরকম জোরালো কণ্ঠ না থাকা দেশবাসীর মনে যে হতাশা তৈরি করেছে, তা বলাই বাহুল্য। চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ঝাও কেঝি বাংলাদেশ সফর তাই বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সফরকালে চীনা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তার দেশের অবস্থান তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পক্ষে মন্ত্রীর বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই।

এর আগে ভারতও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তাদের মনোভাব জানিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সব চেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে চীনের। ভারতের সঙ্গেও মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। ভারত এবং চীন এই উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

ফলে এ দুটি দেশ বাংলাদেশের সমস্যার বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবে এবং এই সংকট সমাধানে দেশ দুটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App