×

পুরনো খবর

শরিকদের ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ-বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৫৬ পিএম

শরিকদের ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ-বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাসদ বা জাপাকে ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এদিকে বিএনপিও রাজি নয় জামায়াতকে ছাড় দিতে। বিএনপি বর্জন করায় এ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজি নূরুল আমিন বাচ্চুকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন জাসদ প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। আগামী নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন এ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। এদিকে হাতছাড়া হওয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি নিচ্ছে নানামুখী পরিকল্পনা। এবার এ আসনে নতুন মুখ দিয়ে চমক দেখাতে পারে দলটি। শেষ মুহ‚র্তে অন্য দলগুলোর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে জামায়াত। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কাহালু উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসন। এটি জামায়াতের সহিংসতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় এই নন্দীগ্রাম উপজেলা বারবার আলোচনায় এসেছে সহিংসতা-নাশকতার কারণে। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৪৪ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৯ আর পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৫ জন। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪১০ ও কাহালু উপজেলায় সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৩৪ জন। একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন স্থানে দলীয় প্রধানের ছবির পাশাপাশি বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নিজের ছবি সংবলিত পোস্টার ও ফেস্টুন লাগিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দলের একাধিক নেতা নির্বাচন করার ইচ্ছার কথা জানান দিচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় ডজনখানেক নেতা মাঠে রয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার জেড আই এম মোস্তফা আলী মুকুল নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাপা প্রার্থীর সঙ্গে জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। রেজাউল করিম তানসেন আশা করছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে তিনিই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন পাবেন। আর নৌকা প্রতীক পেলে তার জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অনেকটাই সহজ হবে। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে এবার ভোটের মাঠ কাঁপাচ্ছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মমতাজ উদ্দিন। তিনি ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে কাহালু-নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জনসভা করছেন। স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অভিমানী নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন। তিনি জয়ের আশায় আঁটঘাট বেঁধে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন। ওয়ার্ডভিত্তিক উঠান বৈঠক, মহিলা সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ড তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইউনুস আলী মণ্ডল, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন কবিরাজ, বগুড়া জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হেলালুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আলহাজ অধ্যাপক আহছানুল হক মাঠে রয়েছেন। এ আসনটিতে বিএনপির অবস্থান আগে থেকেই শক্তিশালী। সংসদের বাইরে থাকা দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য জেড আই এম মোস্তফা আলী মুকুল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি এডভোকেট রাফি পান্না, জেলা বিএনপির সদস্য ও জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আলহাজ মোশারফ হোসেন, সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফজলে রাব্বী তোহা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট গোলাম আকতার জাকির। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা আলী মুকুল গণসংযোগ করছেন। তবে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী মোশারফ হোসেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবুজ সংকেত পেয়ে এলাকায় বেশি সময় দিচ্ছেন। প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা মিলছে তার। তাছাড়া রাজনৈতিক মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদেও আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে মামলার খরচ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ নেতা। ২০০৮ সাল থেকে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। মোশারফ হোসেন বলেন, বিএনপির দুঃসময়ে সব নেতাকর্মীর পাশে ছিলাম, এখনো আছি। দল অবশ্যই আমার কাজের মূল্যায়ন করবে। ডা. জিয়াউল হক মোল্লা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, দলের হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে মনোনয়ন দিতেও পারে। এডভোকেট রাফি পান্নার সঙ্গে রয়েছে বিএনপির আরেকটি অংশ। তারও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। মাঠে ময়দানে জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এলাকায় দলটির প্রভাব ও পকেট ভোট রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কাহালু উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির তায়েব আলীর পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছেন। নন্দীগ্রাম-কাহালু আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও দলে কোন্দল আছে। জামায়াত এখানে বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা বিএনপির কাছে বেশ জোরালোভাবে এ আসনটি দাবি করছেন। জাপা থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে নানাভাবে উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন গত নির্বাচনে দলটির প্রার্থী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজি নূরুল আমীন বাচ্চু, যুব সংহতির বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক, আছির উদ্দিন কবিরাজ ও আব্দুস সালাম বাবু। আগামী নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে নানা ভাবনা। তবে সাধারণ ভোটাররা এলাকায় তরুণ নতুন মুখকে দেখতে চান বলে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App