×

পুরনো খবর

বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৫ পিএম

বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ
কথিত আছে সংসদ নির্বাচনে হজরত খানজাহানের (রহ.) পুণ্যভূমি বাগেহরহাট সদর ও হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর সিলেট সদর আসনে যে দল বিজয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে। তাই আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের কাছেই বাগেরহাট-২ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আসনটি ধরে রাখতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্যকে প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ। অপরদিকে আসনটি পুনরুদ্ধারে তৎপর বিএনপি। বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের শেখ আব্দুর রহমান, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির শেখ আব্দুর রহমান, ১৯৯১ সালে বিএনপির আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান), ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী দারু ও ২০০১ সালে বিএনপির এম এ এইচ সেলিম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের এডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আগামী নির্বাচনে এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র প্রধানমন্ত্রীর চাচাত ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মীর সাখাওয়াত আলী দারুর সহধর্মিণী বঙ্গবন্ধুর নিকটাত্মীয় ফরিদা আক্তার বানু লুচি প্রমুখ। এদের মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ করছেন এডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও ফরিদা আক্তার বানু লুচি। তবে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার পক্ষে মাঠে প্রচারণা করতে এসে সাধারণ মানুষসহ তরুণ ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন শেখ পরিবারের তরুণ নেতা শেখ সারহান নাসের তন্ময়। দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হলে বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে পারেন তিনি। বাগেরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সাংসদ ও পৌর মেয়রসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, যা এখনো বিদ্যমান। এ দূরত্ব অব্যাহত থাকলে এবং বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে এলে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সচেতন মহল। এ অবস্থায় শেখ হেলাল উদ্দিন অথবা তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময় প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের অবসান ও নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তারা। সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, পৌরসভা ও উপজেলার কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে তার দূরত্ব নেই, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। অনেক যোগ্য নেতা আছেন। সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে চান। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন নৌকার পক্ষে আমরা সবাই মিলে তার জন্য কাজ করব। নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, দরিদ্র ভ‚মিহীনদের ভ‚মিদানসহ সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে যুগান্তকারী উন্নয়ন করছে তা সঠিকভাবে জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরেন এ নেতা। বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বর্তমান সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, সেটা কখনো সংঘাতে রূপ নেয়নি। তবে নেত্রী নৌকা যাকে দেবেন নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার সঙ্গে কাজ করবেন। বাগেরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বশিরুল ইসলাম বলেন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও চান শেখ পরিবারের কেউ যেন প্রার্থী হয়ে আসেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম , ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম খান। এর মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। আমরা ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এ আসনে জয়ী হয়েছি। ২০০৮ সালেও আমি জয়ী হয়েছিলাম, আমার ভোট পাল্টে আমাকে হারানো হয়েছে। তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত আছে। আওয়ামী লীগ গণসংযোগ করলেও পুলিশি বাধার কারণে আমরা গণসংযোগ করতে রাস্তায় নামতে পারছি না। নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। দল মনোনয়ন দিলে আর নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে দাবি করেন । জেলা বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দল করার কারণে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আসামি হয়েছি। দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। আমার যোগ্যতা বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবেন বলে আশা করি। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, আমার বাবা বিটিশ আমলে এমএলএ, পাকিস্তান আমলে সংসদ সদস্য এবং বাগেরহাট পৌরসভার ফাউন্ডার চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি ও আমার পরিবার বিএনপির সঙ্গে জন্মলগ্ন থেকে আছি। আমাদের পরিবারের বাগেরহাট কচুয়ায় গ্রহণযোগ্যতা আছে। এ আসনে মনোনায়ন পাওয়ার একমাত্র অধিকার আমার। আমি মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App