×

মুক্তচিন্তা

গৃহকর্মী শিশুর ওপর এ কেমন নির্যাতন!

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩১ পিএম

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের নাগরিক, শিশু গৃহকর্মীরাও এর বাইরে নয়। সুতরাং রাষ্ট্র আগামী দিনের নাগরিকদের জীবন বিপর্যয়ের মধ্যে রেখে নির্দায় থাকতে পারে না। এ বিষয়ে আইনের সংস্কার হোক, নজরদারির জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করা হোক। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি গৃহকর্মী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধও গড়ে তোলা প্রয়োজন।

ফেনীতে ৫ বছরের এক শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতনের অভিযোগে এক গৃহকর্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রিয়াঙ্কা আক্তার নামে শিশুটি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঝলসানো ক্ষত নিয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ মঙ্গলবার মধ্যরাতে গৃহকর্ত্রী শাহানা আক্তার শাহেনীকে আটক করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এ জন্য নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়কেই দায়ী করা যায়। বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি এবং তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী ও শিশুশ্রমিক। এই নারী ও শিশুরাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় সাধারণত শিশু বা কিশোর বয়সী গৃহকর্মী রাখা হয়। গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরতদের বেশিরভাগই মেয়েশিশু বা কিশোরী। কারণ তাদের বেতন কম। অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে শহরে আসে এরা। নিয়োগকর্তা, কর্ত্রী, নিয়োগকর্তার পরিবারের কোনো সদস্য দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণসহ বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানির শিকার হয় এরা।

জানা যায়, নির্যাতিত শিশু প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা নেই। শাহেনী তাকে পালক মেয়ে বললেও তাকে দিয়ে ঘরের কাজকর্ম করাতেন। কারণে-অকারণে শিশুটির ওপর নির্যাতন চালাতেন। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শাহেনী দোষ স্বীকার করে বলেন, তার ওপর জিন ভর করত সে সময় প্রিয়াঙ্কার শরীরে আগুনের ছেঁকা দিলে জিন চলে যেত। আর সে কারণেই তাকে তিনি আগুনের ছেঁকা দিতেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা হয়তো কিছুদিন পর দেখব আসামি ছাড়া পেয়ে গেছে। ব্যতিক্রম দেখেছি গৃহকর্মী আদুরীর ওপর নির্যাতনের দায়ে গৃহকর্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গৃহকর্মী নির্যাতনের প্রায় প্রতিটি ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (খ) ধারায় মামলা হয়। কিন্তু এ আইনটিতে আসামিদের সাজা দেয়ার খুব একটা সুুুযোগ নেই। এ আইনে কেবল দাহ্য পদার্থ দ্বারা পুড়ে গেলে সাজার সুযোগ থাকে। কিন্তু বেত্রাঘাত, গরম খুন্তি, লোহা, ইস্ত্রির ছেঁকা, গরম পানি ঢেলে দেয়া- এ আইনে কভার করে না। গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় দণ্ডবিধির (২৩, ২৪, ২৫, ২৬) ধারায় মামলা করা উচিত। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের নাগরিক, শিশু গৃহকর্মীরাও এর বাইরে নয়। সুতরাং রাষ্ট্র আগামী দিনের নাগরিকদের জীবন বিপর্যয়ের মধ্যে রেখে নির্দায় থাকতে পারে না। এ বিষয়ে আইনের সংস্কার হোক, নজরদারির জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করা হোক। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি গৃহকর্মী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধও গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রিয়াঙ্কার মতো আরো যারা নির্যাতিত হয়েছে বা হচ্ছে তারাও যেন উপযুক্ত বিচার পায়। আর কেউ যেন এমন নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App