×

জাতীয়

শুধু নামেই ‘এ’ গ্রেডের কুলাউড়া পৌরসভা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪৩ পিএম

শুধু নামেই ‘এ’ গ্রেডের কুলাউড়া পৌরসভা!
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা ‘বি’ গ্রেড থেকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হওয়ার দেড় বছরের বেশী সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত ‘এ’ গ্রেডের কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেনা পৌরবাসী। উল্টো তাদের উপর ‘এ’ গ্রেডের করের বোঝা চাপানো হচ্ছে- এমনটি জানালেন পৌরসভার নাগরিকরা। ব্যবসায়ী, পৌর নাগরিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের দাবি- শুধুমাত্র পৌরসভা কার্যালয়কে দ্বিতল-বিশিষ্ট দালান করা ব্যতিত অন্য কোন উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছেনা। তাছাড়া পৌর বাজেটের বিভিন্ন খাতের নির্দিষ্ট বরাদ্দ দেখানো হলেও তা খরচ হয় ভিন্ন খাতে, যদিও সেই খাতগুলো অস্পষ্ট। অবশ্য পৌর কর্তৃপক্ষ দাবী করছে, বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ না হলে সেগুলো কোষাগারে জমা থাকে। প্রাপ্ত তথ্যমতে- ১৯৯৬ সালে কুলাউড়াকে পৌরসভা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ‘বি’ গ্রেডে চলছিলো এর কার্যক্রম। ২০১৬ সালে বর্তমান মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছ দায়িত্বে আসার পর ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী কুলাউড়াকে ‘এ’ গ্রেডের পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। পৌর নির্বাচনের আড়াই বছর পার হলেও কুলাউড়া পৌরসভায় এখনও আশানুরুপ কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে দাবী স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের। তাদের দাবী- অব্যাহত করের বোঝা, লাগামহীন বিল পরিশোধ আর বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে পৌর কর্তৃপক্ষের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হলেও কেউ দেখছেনা পৌরবাসীর ভোগান্তি। পৌরসভার কোন কোন সড়কে এখন পায়ে হাঁটাও যেন খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পৌরবাসীরা জানান, শহরের বেশীরভাগ ড্রেনগুলো সংস্কারের অভাবে ময়লা আবর্জনায় সংকোচন হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। পানি নিস্কাষনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই কুলাউড়া উপজেলা পরিষদে যাওয়ার রাস্তাসহ ডুবে যায় পৌর এলাকা। অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভাঙা চোরা। বেমানান জায়গায় অস্বাস্থ্যকর ডাস্টবিন থাকায় যত্রতত্র রয়েছে ময়লা আবর্জনাসহ পৌর বর্জ্য। শিশুপার্ক বা বিনোদনের জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। নেই ব্যবহারযোগ্য কোন শৌচাগার। ‘এ’ গ্রেডের পৌরসভায় সুপেয় পানীর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক থাকার কথা থাকলেও নেই এর ব্যবস্থা। চলাচলের জন্য ফুটপাথ নেই। শুধু নামে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হলেও কুলাউড়া পৌরসভায় নেই কোন নাগরিক সেবা কিংবা সুবিধা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক যুগেরও বেশী সময় ধরে পৌরসভার ধারাবাহিক বাজেটে মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও আজ অবদি এর কোন কার্যক্রম হয়নি। ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পর বাজেটে এর বরাদ্দ দ্বিগুন করা হলেও নেই এর কোন তৎপরতা। শুধু তাই নয় বেওয়ারীশ কুকুর নিধন বা অপসারণের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তার কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায় নি। পৌরসভা বাজেটে পৌর কবরস্থান সংস্কারের জন্য বরাদ্দ থাকলেও নেই পৌর কবরস্থান। নাগরিকদের সেবায় জন্ম নিবন্ধনের জন্য পৌর বাজেটে বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ টাকা অথচ প্রত্যেক নাগরিককে প্রতি নিবন্ধনের জন্য ১০০ টাকা করে দিতে হয়। খেলাধুলা ও সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ ৫ লক্ষ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে কিন্তু তার কোন খরচের খাত দৃশ্যমান চোখে পড়েনি। গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে পৌর সড়ক নির্মাণে ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও ওই সময়ে কোন রাস্তা নির্মাণ হয়নি। রাস্তা মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৩৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও ওই সময়ে কোন কাজ হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এর কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। ওই সময়ে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার, ডাস্টবিন নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ বাবত ১৫ লক্ষ টাকা, ময়লা আবর্জনা মার্কেট, বাজার, উন্নয়ন, কবরস্থান, অফিস ভবনের স্থান উন্নয়ন সংস্কার বাবত ১০ লক্ষ টাকা, মৃত কুকুর অপসারণ ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের উপকরণ ক্রয় বাবত ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। পৌরবাসীর দাবী বাজেটে উল্লেখিত এসব বরাদ্দ দেখানো হলেও এর কাজ হয়েছে সিঁকি পরিমান। তাছাড়া পৌর এলাকার রাবেয়া আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্মুখ সড়ক, দক্ষিণবাজার থেকে মনসুর পর্যন্ত সড়ক, সাদেকপুরের সড়কগুলোর অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে নাজুক হলেও সড়কগুলোর সংস্কার হচ্ছেনা। কুলাউড়া পৌরসভা প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, বাজেটে উল্লেখিত বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ সম্ভাব্য হিসেবে ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এক খাতে খরচ না হলে ভিন্ন খাতে সেগুলো ব্যয় হয় নতুবা কোষাগারে জমা থাকে। মশক নিধন, কুকুর নিধনের বরাদ্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুকুর নিধনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছেনা। আর মশা নিধনের বরাদ্দ খরচ হয়নি, সেগুলো কোষাগারে জমা আছে। ‘এ’ গ্রেডের পৌরসভায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব শিঘ্রই তা বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা আছে। কুলাউড়া পৌর মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছ এর কাছে পৌরবাসীর আকাঙ্খা এবং তার কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বরাবরের মতো ব্যস্ততা দেখিয়ে মোবাইল ফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App