×

আন্তর্জাতিক

মোদী সরকার এবার শেষ করে দিল সিবিআইকেও

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২৯ পিএম

মোদী সরকার এবার শেষ করে দিল সিবিআইকেও
ভারতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের এক ও দুনম্বর ব্যক্তিতে রাতারাতি তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। গত মধ্যরাতের পর রীতিমতো অভ্যুত্থানের কায়দায় যেভাবে সিবিআইয়ের নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে - বিরোধীরা তাকে অসাংবিধানিক বলে বর্ণনা করছেন, এবং বলছেন এর মাধ্যমে সরকার দেশের আর একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করল। খবর বিবিসির এমনও অভিযোগ উঠছে, সিবিআইয়ের অপসারিত দুনম্বর ব্যক্তি রাকেশ আস্থানা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাকে বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তথা সিবিআইয়ের যেমন বহু সফল তদন্তের ইতিহাস আছে, তেমনি তাদের নিয়ে বিতর্কও কম নয়। দিল্লির ক্ষমতায় যে সরকারই থাকুক, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষর বিরুদ্ধে তাদের সিবিআইকে ব্যবহার করার অভিযোগ বারে বারেই উঠেছে - এমন কী দেশের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সিবিআইকে তুলনা করেছে 'খাঁচায় বন্দী তোতা'র সঙ্গে। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর যে চরম নাটকীয়তার মধ্যে সিবিআইয়ে ক্ষমতার পালাবদল হল, তার কোনও নজির এই সংস্থার পয়ষট্টি বছরের ইতিহাসেও নেই। সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত ভূষণ বলছেন, "সিবিআই-কে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল এই সংস্থার প্রধানকে নিয়োগ করবে একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি - যাতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেতা ও প্রধান বিচারপতি।" "তারা যাকে নিয়োগ করেছেন, তাকে সরানোর ক্ষমতাও আছে কেবল এই কমিটিরই।" কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না-করেই সিবিআই অধিকর্তা অলোক ভার্মাকে রাত আড়াইটার সময় ছুটিতে পাঠানো হয়, সিল করে দেওয়া হয় তার পুরো অফিস। কেড়ে নেওয়া হয় তার গাড়ি, ড্রাইভার। তার কর্মীদের কাউকে কাউকে বদলি করা হয় সুদূর আন্দামানে। একই ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হন বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানাও - যার বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছিল অলোক ভার্মার টিম। মি আস্থানাও তার বসের বিরুদ্ধে দায়ের করেন পাল্টা অভিযোগ। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলেন, "যে বেআইনি পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে মোদী-অমিত শাহ জুটি সিবিআইতে অভ্যুত্থান ঘটালেন তা শুধু গোটা ভারতকেই লজ্জিত করেনি, দেশের সব প্রতিষ্ঠানকেও লজ্জায় ফেলেছে।" নিজের চামড়া বাঁচাতেই প্রধানমন্ত্রী এভাবে দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থার স্তম্ভগুলো ভেঙে দিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইট করেন, "সিবিআই এখন বিবিআই-তে পরিণত হয়েছে, অর্থাৎ বিজেপি ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন!" বিষয়টাকে 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক' বলেও বর্ণনা করেন তিনি। কংগ্রেস এমপি সুস্মিতা দেবও বলেন, "একজন স্বৈরাচারীর প্রথম লক্ষণই হল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা - নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঠিক সেটাই করছে।" বামপন্থী নেত্রী বৃন্দা কারাটও মনে করেন, বিতর্কিত আমলা রাকেশ আস্থানাকে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন বলে সিবিআইয়ের মাথায় এসে বসানো হয়েছিল, তাতে এই পরিণতি অনিবার্য ছিল। মিস কারাট বলেন, "সব প্রতিষ্ঠানকেই বিজেপি ধ্বংস করছে।" "আর এক্ষেত্রে তো নিয়োগের একমাত্র যোগ্যতা ছিল তিনি রাজনৈতিক বস-দের জো-হুজুর হয়ে চলবেন কি না - ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।" সিবিআই-কে ঘিরে এই কেলেঙ্কারিতে সরকার যে সাফাই দিচ্ছে, সেটাও যে বেশ দুর্বল শোনাচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এদিন বলেছেন, "সিবিআইয়ের দুই প্রধান কর্মকর্তার মধ্যে বিরোধকে ঘিরে যে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে বাঁচতেই বাধ্য হয়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।" "যতই হোক, আজও দেশে যখনই কোনও গুরুতর ঘটনা ঘটে লোকে সিবিআই তদন্তই দাবি করে - ফলে তাদের সেই সুনামটা বাঁচানোটা জরুরি।" তবে এর আগে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, নির্বাচন কমিশন বা এমন কী সুপ্রিম কোর্টের ওপরও প্রভাব খাটানোর বা ডানা ছাঁটার যে সব অভিযোগ উঠেছে - সিবিআই নি:সন্দেহে সে তালিকায় সবশেষ সংযোজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App