×

মুক্তচিন্তা

ভর্তিচ্ছুকদের নতুনভাবে পরীক্ষা নেয়া হোক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০৮ পিএম

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী শক্তিশালী চক্র দাঁড়িয়ে গেছে, যাদের কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা আশা করব, নিজেদের সুনামের স্বার্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু উত্তীর্ণদের নয়, ভর্তিচ্ছুকদের নতুনভাবে পরীক্ষা নেবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই অধঃপতিত অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এ পর্যন্ত সরকার গৃহীত কোনো ব্যবস্থাই ফলদায়ক হয়নি। এর প্রমাণ ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ফৌজদারি অপরাধ, যারা জড়িত তাদের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে। তাদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যদিকে এই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা চালানোর বিষয়টিও ভর্তিচ্ছুক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে অন্যায় আচরণ এবং বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। উচ্চ শিক্ষার শুরুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

জানা যায়, গত ১২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে ৯টা ১৭ মিনিটে এ পরীক্ষার উত্তরসহ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। পরে মূল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যাচাই করে দেখা যায়, পরীক্ষার আগে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে ৭২টি প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু মিলে গেছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গণমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি তাদের অনুসন্ধানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পায়। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৬ অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ করে। এ বছর ‘ঘ’ ইউনিটে ২ হাজার ৬১৫টি আসনের বিপরীতে ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ১৮ হাজার পরীক্ষার্থী। ফেল করেছেন ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সুরাহা না করেই ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসছে। এমতাবস্থায় গত মঙ্গলবার বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ‘ঘ’ ইউনিটে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবারো ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে বলে ঘোষণা দেয়। সাধারণ পরীক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে এ সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা বলছে, প্রশ্নফাঁস হওয়ার কারণে যারা প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পেয়েছে, তাদের অকৃতকার্য হওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই তারা পাস করেছে। কাজেই শুধু উত্তীর্ণদের পরীক্ষা নিলে অপরাধীরাই এ সিদ্ধান্তেও সুবিধাভোগী হবে। তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের একাংশ যে মেধার গুণে নয়, জালিয়াতির কারণে উত্তীর্ণ হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। অনেকে তো পরীক্ষার সময়ই প্রশ্নফাঁস হয়েছে জেনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ফেল করেছে। শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগগুলো প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী শক্তিশালী চক্র দাঁড়িয়ে গেছে, যাদের কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা আশা করব, নিজেদের সুনামের স্বার্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু উত্তীর্ণদের নয়, ভর্তিচ্ছুকদের নতুনভাবে পরীক্ষা নেবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এসব মাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে যথোচিত শাস্তি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা গোটা প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত সংস্কার আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App