×

মুক্তচিন্তা

স্বাস্থ্যসেবায় অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩০ পিএম

চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সরকার প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বাজেট বাড়াচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনৈতিক কারসাজির সিন্ডিকেটেড বাণিজ্যের জন্য সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র মানুষ। এ ধরনের হয়রানি ও অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে দেশের বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গঠিত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। দেশে সময়ে সময়ে উদ্ভূত জনস্বাস্থ্য সেবার সমস্যা ও সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি। কমিটি গঠনের বিষয়টি গত সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি বিভিন্ন পত্রিকায় সার্কুলার জারি করে মূল্য তালিকা তৈরি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের জন্য বলা হয়েছে। পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করে। চলতি বছরের ২৪ জুলাই এক আদেশে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি তালিকা করে টানাতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই আদেশের পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্যাথলজি পরীক্ষার ফি, সেবার মূল্য তালিকা এবং চিকিৎসার ফির তালিকা করে প্রকাশ্যে টানানোর আদেশ জারি করে। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক উদ্ভাবনের সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। তবে অর্থনৈতিক কারণে এ সুবিধা সবার কাছে সমভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিশেষভাবে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ সমস্যা আরো তীব্র হয়, যখন চিকিৎসকরা অনেক ধরনের পরীক্ষার নিদান দেন। মেডিকেল টেস্টকে কমবেশি সব চিকিৎসক বাড়তি উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করছেন, এমন অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। এই নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি কম হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে অভিযান চালানোর খবরও কম নয়। বলা যায় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভয়াবহ বাণিজ্য চিত্র আমাদের সামনে উঠে আসে। অবশেষে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপে আসে। সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যসেবার মূল্য সর্বশেষ গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১০ সালে। একই বছরের ২ মার্চ এটি সংশোধন করে একটি পরিপত্র জারি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। রোগীর সুবিধার্থে সব হাসপাতালে এটি প্রদর্শনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকারি এ পরিপত্র সরকারি হাসপাতাল মানলেও বেসরকারি হাসপাতালে তার সমন্বয় নেই। চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সরকার প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বাজেট বাড়াচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনৈতিক কারসাজির সিন্ডিকেটেড বাণিজ্যের জন্য সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র মানুষ। এ ধরনের হয়রানি ও অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App