×

অর্থনীতি

‘নগদ’ কার্যক্রম নিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৭ পিএম

‘নগদ’ কার্যক্রম নিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা
সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাচ্ছে জঙ্গিরা। এ অর্থ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস, হুন্ডি ও ভুয়া রপ্তানি বিল। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে ব্যাংকিং খাতে আর্থিক লেনদেনের আধুনিক পদ্ধতিগুলোতে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। বিআইবিএম-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতিসহ আধুনিক লেনদেন পদ্ধতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা জারি করেছে। তবে একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ ডাক বিভাগের নতুন ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর কার্যক্রম নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত ‘নগদ’ সার্ভিসটি পোস্টাল অ্যাক্টের আওতায় পরিচালিত হওয়ার ফলে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আইনের এই ফাঁককে ব্যবহার করে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার থেকে কয়েক গুণ বেশি লেনদেন সীমা নিয়ে নগদের এই কার্যক্রম অপব্যবহারের আশঙ্কা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ পোস্টাল অ্যাক্ট অনুসারে ‘নগদ’ কার্যক্রমটি চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে এই সেবা দেয়ার জন্য এজেন্ট নিয়োগও চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে যে ধরনের সেবা পাওয়া যায়, ‘নগদ’ও একই ধরনের সেবা দেবে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া যে লেনদেন হয়, তা সন্দেহজনক। আর নির্বাচনের আগে প্রচারের জন্য কালো টাকার লেনদেন বৃদ্ধি পায়। তাই বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে অর্থ লেনদেন রোধ না করা হলে কালো টাকারও হদিস পাওয়া যাবে না। জানা গেছে, বাংলাদেশের সব ধরনের পেমেন্ট সেবার লাইসেন্স এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট বিষয়টি তদন্তের জন্য ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে ‘নগদ’ ব্যবহার করে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বিষয়ে তাদের মতামত জানাতে একটি চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানের বাইরে মোবাইলের মাধ্যমে এত বেশি পরিমাণ অর্থ লেনদেন মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বাড়াবে। পরবর্তী সময় যা দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের জন্য লিমিট বা সীমা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ‘নগদ’-এর মাধ্যমে এই লিমিটের বহুগুণ বেশি অর্থ লেনদেন করা যাবে, যা মানি লন্ডারিংকে উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুসারে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস (এমএফএস) এ দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা লেনদেনের সুযোগ থাকলেও ‘নগদ’-এর মাধ্যমে দিনে আড়াই লাখ টাকা লেনদেন করা যাবে। তা ছাড়া অবৈধ অর্থ লেনদেন নিয়ন্ত্রণের জন্য এমএফএস নীতিমালা অনুসারে একটি এনআইডির বিপরীতে একটি কোম্পানির একটি মাত্র অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আছে। ‘নগদ’ পরিচালিত হবে পোস্টাল অ্যাক্ট অনুসারে। সেক্ষেত্রে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কয়টি ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে তা অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেনের সুযোগের কারণে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে র‌্যামিটেন্স আসার পথ সুগম করবে। সেই সঙ্গে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এ ব্যাপারে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মন্ডলকে ফোন দিলে তিনি নগদের কাউন্টারে যোগাযোগ করার কথা বলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নগদের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আমাদের যে পোস্ট অফিস আইন আছে, সেই আইন দেখে নেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে আমরা চলি না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তো কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না। পোস্ট অফিস হাজার কোটি টাকা লেনদেন করছে। কোনো মানি লন্ডারিংয়ের কেস কেউ পেয়েছে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App