×

মুক্তচিন্তা

খুন-খারাবি বাড়ছে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০২ পিএম

অনেক আলোচিত চাঞ্চল্যকর হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা বিচারহীন থাকছে দিনের পর দিন। অপরাধীরা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে লঘু দণ্ডে পার পেয়ে যেতে পারছে। নাগরিকদের রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর দ্রুত তার রহস্য উদঘাটন করা এবং অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।

রাজনৈতিক ও সামাজিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হরহামেশাই বড় ধরনের খুনের ঘটনা ঘটত। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ধরনের খুনের ঘটনা আগের তুলনায় কমে গেছে। বেড়ে গেছে বীভৎস, বিকৃত ও লোমহর্ষক খুনের ঘটনা। প্রতিদিনই এই ধরনের খুনের ঘটনা কোথাও না কোথাও ঘটছে। পাওয়া যাচ্ছে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ। সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এসব কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতির দৃষ্টান্তই নয়, সামাজিক অসুস্থতারও লক্ষণ।

গত রবিবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চার যুবকের মাথা ও মুখমণ্ডল থেঁতলানো এবং গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে সড়কের ধারে লাশগুলো পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি দেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার এবং একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে। এ ছাড়া রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকায় কাশবন থেকে আগের দিন শনিবার দুই যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ছয়জনেরই বয়স ৩৫ বছরের কিছু কম বা বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। গত মাসে ১৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের আলমপুর এলাকার ৩০০ ফুট সড়কের ১১নং ব্রিজের নিচ থেকে পুলিশ তিন ব্যবসায়ী যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। নিহতদের স্বজনদের দাবি, তারা কেউ রাজনীতি বা কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে পুলিশ বলছে, কারা এবং কি উদ্দেশ্যে তাদের হত্যা করেছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা সারাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে। পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত সাড়ে ৫ বছর সারা দেশে ১৯ হাজার ৭২১ জন খুন হয়েছে। একই সময়ে রাজধানীতে খুন হয়েছে ১ হাজার ৯০ জন। ২০১৭ সালে বিভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৯ জন। ২০১৬ সালে ৮৭৯ জন, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৫২৩ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৯৮৮ জন খুন হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়া ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। ভোগবাদী হয়ে উঠছে মানুষ। কমছে মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ। এ কারণে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে একে অপরকে নৃশংস খুন করতে দ্বিধা করছে না। সাধারণভাবে এ ধরনের খুন-খারাবি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিই নির্দেশ করে। দেশে আইনের শাসন, অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা বলবৎ থাকলে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে থাকারই কথা। আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে তা স্বীকার করতেই হবে। অনেক আলোচিত চাঞ্চল্যকর হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা বিচারহীন থাকছে দিনের পর দিন। অপরাধীরা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে লঘু দণ্ডে পার পেয়ে যেতে পারছে। নাগরিকদের রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর দ্রুত তার রহস্য উদঘাটন করা এবং অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App