×

পুরনো খবর

নানা মেরুকরণ হতে পারে আ.লীগে, বিএনপিতে খোকার ছেলে ইসরাক?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৯ পিএম

নানা মেরুকরণ হতে পারে আ.লীগে, বিএনপিতে খোকার ছেলে ইসরাক?
নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রায় সব দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে নিজেদের ছবি এবং সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে অলিগলিতে টাঙিয়েছেন। রাজধানীর সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, ওয়ারী, গেণ্ডারিয়া ও বংশালের আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ থেকে ৪৭ ও বংশালের একটি ওয়ার্ড এ আসনের অন্তর্ভুক্ত। ভোটার সংখ্যাও প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি। পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক এ আসনটি গুরুত্বের দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। এবারো তিনি প্রার্থী। মহাজোটের স্বার্থে তিনি এবারো মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে, টানা ২ মেয়াদে জাপার প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে আওয়ামী লীগ দুর্বল হবে এ এলাকায়। কারণ আসনটিতে রয়েছে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহম্মেদ মান্নাফী, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্র ও যুবলীগ নেতা চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা গাজী আবু সাঈদ। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বেশ জোরালো আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার নাম। শারীরিক অসুস্থতা ও মামলার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে নানা কারণে সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচন করতে না পারলে তার ছেলে প্রকৌশলী ইসরাক হোসেন বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার। শেষ পর্যন্ত জোট-মহাজোট ইস্যুতে সমঝোতার ভিত্তিতে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী অথবা তার ছেলে মাহী বি চৌধুরীও প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে। সরেজমিন ঢাকা-৬ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বি চৌধুরী ছাড়া প্রায় সব দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুনে নিজেদের ছবি এবং সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে অলিগলিতে টাঙিয়েছেন। তবে সব এলাকাতেই দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার সবচেয়ে বেশি। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রতিদিন নিজেদের মতো করে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নও প্রচার করছেন। নেতাকর্মী ও অনুসারীদের নিয়ে শোডাউনও করছেন। অংশ নিচ্ছেন মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। জানান দিচ্ছেন নিজের অবস্থান। তবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতারা এ আসনটিতে মনোনয়ন না পাওয়ায় কিছুটা হতাশা দেখা গেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এবার তারা নৌকা প্রতীকে নিজ দলের একজন পরীক্ষিত নেতাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়ন পান ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। ওই নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকার কাছে হেরে যান তিনি। নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার ছেলে মিজানুর রহমান চৌধুরী দীপু (প্রয়াত)। দশম নির্বাচনেও দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু জোটের স্বার্থে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। দশম নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই এলাকার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব খুব একটা তৈরি হয়নি। সবার সঙ্গেই তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও মোটামুটি ভূমিকা রেখেছেন। জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হলে এবারো তিনিই এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেন বলে এমনটিই মনে করছেন স্থানীয়রা। এবার আওয়ামী লীগ থেকে বেশ জোরেশোরে আলোচনায় আছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী ও এই এলাকার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলুর নাম। দুই প্রার্থীই মাঠে এখন সক্রিয়। তবে প্রচার-প্রচারণায় লাভলুই এগিয়ে আছেন। আবু আহমেদ মান্নাফী ভোরের কাগজকে বলেন, আমি ৫৮ বছর ধরে এলাকায় রাজনীতি করছি। সবার কাছেই আমি পরিচিত। এখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে জনগণের জন্য কাজ করছি। সংসদ সদস্য হয়ে ঢাকা-৬ আসনের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এলাকায় আমার অবস্থান ভালো। ইনশাল্লাহ নেত্রীও আমাকে সমর্থন দেবেন। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু বলেন, আমি বৃহত্তর সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। অবিভক্ত ঢাকা মহানগর যুবলীগের কার্যকরী সদস্য এরপর ৩৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছি। আমি এলাকায় কাজ করছি। নেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। প্রতিনিয়ত গণসংযোগ করছি। সবার সমর্থন পাচ্ছি। নৌকার প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাকে দলের মনোনয়ন দিলে আমি এ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তবে সার্বিকভাবে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি সবার সমর্থন চাইব। আর দল যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, তার পক্ষেই আমি কাজ করব। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবেও অসুস্থ তিনি। নির্বাচনের আগে দেশে ফিরলে তিনি বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন। আর যদি কোনো কারণে তিনি প্রার্থী হতে অপরাগ হন অথবা দেশে ফিরতে না পারেন সে ক্ষেত্রে তার ছেলে প্রকৌশলী ইসরাক হোসেনই বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন। ইসরাক এ এলাকায় পরিচিত মুখ। তবে বর্তমানে মাঠে খোকা ও তার পরিবারের কেউ না থাকলেও খোকার অনুসারীরা ইসরাকের বিষয়ে মাঠে সোচ্চার রয়েছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। খোকার অনপুস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে দল থেকে তিনিই ধানের শীষ প্রতীক পাবেন বলে এলাকায় প্রচারণা রয়েছে। সে হিসেবে মাঠে কাজও করছেন তিনি। বিএনপির যে কোনো কর্মসূচিতে তিনি বড় বড় শোডাউন দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ বলছেন, আগামী নির্বাচনে বাশারই হবেন এ আসনে বিএনপির মূল কাণ্ডারি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর এ আসন থেকে কুলা প্রতীকে নির্বাচন করেন বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। মাত্র ৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। দশম নির্বাচনে তার দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে এবার বিকল্প ধারার নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতাও করতে হতে পারে তাকে। এমনকি তার ছেলে বিকল্প ধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীও এ আসন অথবা মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মনে করছে, বিএনপি ও ড. কামালের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ছিটকে পড়ায় এমপি হতে হলে আওয়ামী লীগের ওপরই বি. চৌধুরীকে ভর করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত বদরুদ্দোজা চৌধুরী-ই হতে পারেন এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App