×

জাতীয়

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফাদার রিগন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৪৭ পিএম

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফাদার রিগন

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার শেহলাবুনিয়ায় সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফাদার মারিনো রিগন।

ফাদার রিগনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আজ রোববার দুপুর আড়াইটায় শেহলাবুনিয়ায় অবস্থিত ক্যাথলিক চার্জমিশনের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় বিশপ জেমস রমেন বিশ্বাসসহ স্থানীয় অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ফাদার রিগনের দেহাবশেষ মোংলা উপজেলা কমপ্লেক্স চত্বরে আনা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানান। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় ফাদার রিগনকে।

এ সময় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম, ফ্রান্সিস সুদান হালদার, শেলাবুনিয়া ধর্মপল্লির পালক পুরোহিত শেরাফিন সরকার, দৈনিক সুন্দরবন পত্রিকার সম্পাদক সেখ হেমায়েত হোসেনসহ অসংখ্য ভক্ত ও মোংলার সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

পরে দুপুরে তার দেহাবশেষ শেহলাবুনিয়ায় নিয়ে গির্জায় রাখা হয়। সেখানে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পর ক্যাথলিক চার্জমিশনের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ফাদার মরিনো রিগন ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি এদেশে এলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ফাদার রিগন বেঁচে থাকবেন আমাদের মধ্যে।

তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতিবছর তার জন্মদিনে মোংলায় রিগন মেলা করার ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা সিটি মেয়র।

বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বাংলানিউজকে বলেন, ভিনদেশি হয়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের মৃত্যুর কথা চিন্তা না করে ক্যাম্প খুলে যুদ্ধাহত মানুষের সেবা করে গেছেন। তার ঋণ শোধ হবার নয়।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার পাশাপাশি এদেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই মহান ব্যক্তি ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ইতালিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ সরকার ফাদার রিগনের শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তার দেহাবশেষবাংলাদেশের মাটিতে তারই স্থাপিত শেলাবুনিয়া চার্চের পাশে সমাহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে শেষে তিনি মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে একটি চার্চ ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই গ্রামেই তার স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন। যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে গোপনে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন তিনি। তার এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। এরপর ২০১২ সালে দেয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’।

বাংলাদেশে বসবাসের পর থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার কৌতূহল ও নিবিড় ভালবাসার জন্ম হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি, লালনের সংগীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তার মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলী’সহ প্রায় ৪০টি কাব্য, জসীমউদ্দীনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App