×

জাতীয়

কাঁচপুরের শীতলক্ষ্যায় অবৈধ বালু ব্যবসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম

কাঁচপুরের শীতলক্ষ্যায় অবৈধ বালু ব্যবসা
সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মৌজার শিমরাইল ও কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিমপাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সবুজ বনায়নের সরকারি গাছ কেটে একটি প্রভাবশালী মহল অবাধে অবৈধ পাথর ও বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নদীর সীমানা পিলারের ভেতরেই পাথর, সিলেকশন বালু বা সিলেট সেন্টসহ পাথরের ব্যবসা চালাচ্ছে। এতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াকওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম রাতের আঁধারে সরকারি গাছ কেটে জায়গা ভাড়া দিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বনায়নের মাঝেই প্রকাশ্যে চলছে পাথর ও বালু ব্যবসা। ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান করেও লাভ হচ্ছে না। আগের মতোই নষ্ট হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর পরিবেশ। শীলতলক্ষ্যা নদী থেকে বালুবাহী ট্রলারের বালু উত্তোলনের সময় বালু ও পাথর নদীতে পরে ভরাট হচ্ছে শীতলক্ষ্যার তলদেশ। এতে ধীরে ধীরে শীতলক্ষ্যার গতিপথও পরিবর্তন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। জানা যায়, ২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট শীতলক্ষ্যা নদীসহ রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৪টি নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক বছরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ অংশে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন করা হয়। স্থানীয়রা জানান, তিন মাস ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম রাতের আঁধারে তার লোক দিয়ে ওয়াকওয়ের পাশের বনায়নের গাছ কেটে পরবর্তীতে ওই জায়গা ভাড়া দিচ্ছে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে। গত সোমবার শীতলক্ষ্যা নদীর শিমরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে অবাধে সিলেকশন বালু বা সিলেট সেন্ট ও পাথর নদীর সীমানা পিলারের ভেতরের বনায়নের জায়গায় রাখা হচ্ছে। শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটে সারিবদ্ধভাবে বালুভর্তি ও পাথরভর্তি নৌযান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বনায়নের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে টয়লেট ও দোকানপাট। রাখা হয়েছে অংসংখ্য ট্রাক। নদীর সীমানা পিলারের ভেতরে বনায়নের জায়গায় খালি ঘরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের গদিঘরও দেখা গেছে। সরেজমিন আরো দেখা যায়, মেসার্স আতরবানু ট্রেডার্স (মালিক মনির হোসেন), মেসার্স শীতলক্ষ্যা এন্টারপ্রাইজ (মালিক আনোয়ার হোসেন চাঁন মিয়া), মেসার্স মুক্তার এন্টারপ্রাইজ (মালিক মুক্তার হোসেন), খাজা বাবা ফরিদপুরী (মালিক জাহাঙ্গীর), ফিরোজ এন্টারপ্রাইজ (মালিক ফিরোজ), মেসার্স সতেজ এন্টারপ্রাইজ (মালিক মো. আবুল কাশেম) ও সেভেন বিল্ডার্স (মালিকের নাম জানা যায়নি), সালাহউদ্দিন ওরফে লাদেন সালাহউদ্দিন গদিঘর ও গদির বালু, সিলেট সেন্ট ও পাথর স্ত‚প আকারে রাখা হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন শুরু হয়। চলে দিনভর। মেসার্স মুক্তার এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার কামরুজ্জামান বলেন, এ গদির জায়গাটি নজরুল ইসলামের কাছ থেকে আমাদের মালিক মুক্তার হোসেন ভাড়া নিয়েছেন। কত টাকা ভাড়া দিতে হয় সেটি মালিক জানেন। তিন মাস আগে এ গদির জায়গাটি ভাড়া নেয়া হয়। তারা বিক্রি করছেন প্রতি ট্রাক ৬-৭ হাজার টাকায় সিলেট সেন্ট (সিলেট বালু)। মেসার্স আতরবানু ট্রেডার্সের কর্মচারী জজ মিয়া জানান, এ গদির মালিক মনির হোসেন। তার সিলেট বালি নদীর সীমানা পিলারের মধ্যে বনায়নের ভেতরে স্ত‚প আকারে রাখা হয়েছে। মেসার্স মুক্তার এন্টারপ্রাইজের মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে জায়গাটি যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া শর্তে বালুর ব্যবসা পরিচালনা করছি। এ ছাড়া কিছু টাকা অগ্রিম দিয়েছি। এভাবেই বনায়ন কেটে ও সীমানা পিলারের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে পাথর ও বালুর ব্যবসা করছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম ৪ লাখ টাকা অগ্রিম ও ৪০ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে উল্লিখিত জায়গায় ব্যবসা করতে দিয়েছেন। এ ছাড়া নজরুল ইসলাম বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান বালু ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, আমি শীতলক্ষ্যা নদীর পেপার মিলস এরিয়া থেকে তাজজুট মিল পর্যন্ত ঘাট ইজারা নিয়ে ব্যবসা করছি। কোনো গাছ কেটে ব্যবসা করছি না। বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী বলেন, শিমরাইল এলাকায় নজরুল ইসলাম ওরফে বাইট্টা নজরুল নামে একজন বিআইডব্লিউটিএর জায়গা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছে। বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের লোকজন গত রবিবার শিমরাইল এলাকায় গিয়ে ওই স্থানের ছবিও উঠিয়ে এনেছেন। আমরা নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব। বিআইডব্লিউটিএর কোনো কর্মকর্তা ওই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই বলে তিনি দাবি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App