×

পুরনো খবর

আসন উদ্ধারের চেষ্টায় মহাজোট, বিএনপিতে নয়া মুখের সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম

আসন উদ্ধারের চেষ্টায় মহাজোট, বিএনপিতে নয়া মুখের সম্ভাবনা
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত রাজধানীর শ্যামপুর-কদমতলী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৪ আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নং ওয়ার্ড এবং শ্যামপুর ইউনিয়ন পড়েছে এই আসনটিতে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগাম প্রচারণা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এবারো তিনি জাপার প্রার্থী। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী সংরক্ষিত আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস ড. আওলাদ হোসেন। এ ছাড়া রয়েছেন শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সাইজুল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুনির হোসেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবু। তবে আসনটি উদ্ধারে আওয়ামী লীগ বা মহাজোটকে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুবিধা লুফে নিতে পারেন জাপার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা। অন্যদিকে বিএনপিতে এবার দেখা যেতে পারে নতুন মুখ। নবম জাতীয় সংসদে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে নৌকার সানজিদা খানমের কাছে হেরে যান। এরপর থেকে তাকে এ এলাকার কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। মনোনয়ন পেতে এবার বিএনপির তিনজন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্যামপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভির আহমেদ রবিন ও সাবেক কমিশনার মীর হোসেন মিরু। সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-৪ আসনে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। নিজেদের ছবি ও দলীয় প্রতীক সংবলিত পোস্টার-ফেস্টুনে ছেঁয়েগেছে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক ও অলি-গলি। নিজ নিজ অবস্থান থেকে মিটিং-মিছিল, গণসংযোগ করছেন। কেউ কেউ আবার মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়নে কি করবেন, তার একটি ফিরিস্তি তুলে ধরে লিফলেট করে তা বিতরণও করছেন। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এবার এ আসনে নিজেদের দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে জোটের স্বার্থে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেও প্রস্তুত তারা। সেক্ষেত্রে বিজয়ী হতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে মহাজোট হলে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও আসনটি পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর। নবম সংসদে আওয়ামী লীগের এডভোকেট সানজিদা খানম নৌকা প্রতীকে এ আসনে বিজয়ী হন। বিএনপি থেকে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন মুন্সীগঞ্জের বিএনপি নেতা আবদুল হাই। দশম জাতীয় নির্বাচনে আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে বাবলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত মেনে সানজিদা বাবলাকে সমর্থন দেন। পরে সানজিদাকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করেন দলীয় প্রধান। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে জাপার প্রার্থীর পক্ষে আসনটি উদ্ধার করা খুব কঠিন হবে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় বেশকিছু নেতাকর্মী। তাই তারা নৌকার মনোনয়ন চান। সেক্ষেত্রে এডভোকেট সানজিদা খানম ও ড. আওলাদ হোসেনই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে। জানা গেছে, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি হওয়ার পর ৫ বছরে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে খুব একটা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নেই। তবে এমপি হয়েই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। ভাগ-বাটোয়ারা এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কয়েক দফায় হামলা-পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাপার সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। প্রায় প্রতিদিনই জাপার নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় মিছিল গণসংযোগ ও পথসভা করে লাঙ্গল মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। আবু হোসেন বাবলা এই আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। জানা গেছে, রাজধানীতে জাপার সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে এই আসনে। দলের সকল কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কর্মসূচিতে বাবলার নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি কয়েক হাজার লোক নিয়ে এলাকায় শোডাউনও করেছেন তিনি। ভোরের কাগজকে বাবলা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এখনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও শেখ হাসিনার সহযোগিতায় এমপি হয়েছি। এলাকায় উন্নয়ন করার সুযোগ পেয়েছি। মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন করেছি। এবারো জাতীয় পার্টি থেকে সমর্থন পেয়েছি। আমি শতভাগ আশাবাদী শেখ হাসিনাও আমাকে সমর্থন দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী করবেন। সানজিদা খানম বলেন, আমি অবশ্যই দলের মনোনয়ন চাইব। কারণ আমি দু’বার নৌকা প্রতীক পেয়েছি। আশা করি, এবারো পাব। তবে শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে কাজ করব। তিনি আরো বলেন, বাবলা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন করেছেন ঢাকা-৫ আসন থেকে। প্রতি›দ্বদ্বী প্রার্থীর কাছে হেরেও যান বিপুল ভোটে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল আমাকেই মনোনয়ন দেয়। পরে সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি মহাজোটের স্বার্থে জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করে নিয়ে আসি। তবে এমপি হয়েই তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ ভাবা শুরু করেন। ৫ বছরে রুটিন উন্নয়ন ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো উন্নয়নেই তিনি করতে পারেননি। এ আসনে যা উন্নয়ন হয়েছে, নবম জাতীয় সংসদে আমি এমপি হয়েই করেছি। তাই আমরা মনেপ্রাণে চাইব, এবার যেন ঢাকা-৪ আসনটি অন্যকোনো দল বা প্রার্থীকে দেয়া না হয়। কারণ বিএনপি নির্বাচনে এলে লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এ আসন উদ্ধারে নৌকা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আমি মাঠে কাজ করছি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন আরেক প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস ড. আওলাদ হোসেন। গত নির্বাচনে তিনি জাতীয় পাটির বাবলার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হন। ভোরের কাগজকে ড. আওলাদ জানান, এই এলাকার মানুষের স্নেহ ও ভালোবাসায় আমি বড় হয়েছি। ৫০ বছর ধরে এ এলাকায় আমার বসবাস। এলাকাটি খুবই অবহেলিত। ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এই এলাকার বাসিন্দারা সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত। তাই মানুষের সেবা এবং এলাকার উন্নয়ন করাই আমার রাজনীতি। বিশেষ করে তরুণ ও যুবসমাজের সমর্থন আমি পাচ্ছি। এ এলাকায় ভালো ভালো স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, শ্রমিকদের আবাসন সংকট রয়েছে। এগুলো সমাধানের স্বপ্ন আমি দেখিয়েছি। এবার নারী-পুরুষ, শ্রমিকরা মিলে আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন, আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে- আমি আওয়ামী লীগকে এ আসনটি উপহার দিতে পারব। তবে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যাকে সমর্থন দেবেন আমরা তারই পক্ষে কাজ করব। বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক তানভির আহমেদ রবিন। মহানগর দক্ষিণের নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার পর দুজন আরো বেশি চাঙ্গা হয়েছেন। দলের যেকোনো কর্মসূচিতে তারা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে বড় বড় শোডাউন করছেন। এ দিকে দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া আলোচনায় আরো আছেন সাবেক কমিশনার ও কদমতলী থানা বিএনপির সভাপতি মীর হোসেন মীরু।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App