×

জাতীয়

ভাসানচরে যেতে নারাজ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৮ পিএম

ভাসানচরে যেতে নারাজ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন এত বেশি যে, কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পেও তাদের জায়গা হচ্ছে না। তাই ক্যাম্পের নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। তবে যাদের জন্য এই আয়োজন তারা সেখানে যেতে মোটেও রাজি নয়। উখিয়ার কুতুপালং, মধুরছড়া ও ময়নার ঘোনা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি রোহিঙ্গারা জানেন। তবে তারা বলছেন, জোর করে তাদের সেখানে নেয়া যাবে না। এই ক্যাম্পেই তারা ভালো আছেন। এখানেই তারা থাকতে চান। স্বদেশে (মিয়ানমারে) যদি ফিরতে না পারেন তবে এই ক্যাম্পেই মরতে চান। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ভাসানচরে স্থানান্তরের আগে কারিগরি মূল্যায়ন শেষে রোহিঙ্গাদের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মধুরছড়া ক্যাম্পের মাঝি শফিউল্লাহ জানান, সমস্যা থাকলেও ক্যাম্পে তারা ভালোই আছেন। ভাসানচরে যেতে চান না। ময়নার ঘোনা ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুল হাই (৭৬) বলেন, সব সুযোগ সুবিধা থাকলেও ভাসানচরে দরিয়ার মধ্যে আমরা যেতে চাই না। পানিতে ডুবে মরতে চাই না। আমরা এই ক্যাম্পেই ভালো আছি। তবে অধিকার ফিরিয়ে দিলে আমরা বার্মায় ফিরে যেতে চাই। ৪নং ক্যাম্পের (ইউইউ) জোনের হেড মাঝি মো. হোসেন জানান, বাংলাদেশে যেমন সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান রয়েছে মিয়ানমারে এই পরিবেশ নেই। তারা মুসলমান হওয়ায় সেখানে তারা প্রতি পদে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। নিজ দেশে পরবাসের মতো জীবনযাপন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার আমাদের কত দিন রাখবে জানি না। আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বার্মাবাসীদের আমরা বিশ্বাস করি না। তারা মুখে বলে এক, কাজ করে অন্যটা। তারা মুসলমানদের দেশে রাখতে চায় না। বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের নাগরিকত্ব দিয়ে মুসলমান হিসেবে আমাদের অধিকার নিশ্চিত হলে তবেই আমরা বার্মায় ফিরব। কুতুপালং হিন্দু ক্যাম্পের বাসিন্দা বিজয় বালা রুদ্র (৭০), সোনা বালা রুদ্র (৫৫) ও রবীন্দ্র রুদ্র জানান; নাগরিকত্ব দিয়ে পূর্ণ মর্যাদা দিলে তারা পূর্ব পুরুষের ভিটায় ফিরে যেতে চান। ক্যাম্প-৩ এর চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারা পানিকে ভয় পায়। তাদের ভয়, ভাসানচরে তারা পানিতে ডুবে মারা যাবেন। ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, ভাসানচরে ২৫ হাজার পরিবারকে নেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন বলবেন সেদিনই এই রোহিঙ্গা পুনর্বাসন কার্যক্রম উদ্বোধন করতে তারা প্রস্তুত। জানা গেছে, সরকার নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়। চরটির দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৪ কিলোমিটার। এ চরের একপাশে হাতিয়া ও অন্য পাশে চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলা। প্রাথমিকভাবে এক লাখ রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের জন্য ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে, চরের ভ‚মি উন্নয়ন ও তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ; থাকছে এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউস। আরো থাকবে ১২০টি শেল্টার স্টেশন, মসজিদ, দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য বাসভবন। থাকছে অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় থাকবে নলক‚প ও পুকুর। এ ছাড়া, খাদ্য গুদাম, জ্বালানি, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং ও মুরিং বয়া, বোট ল্যান্ডিং সাইট, মোবাইল ফোন টাওয়ার, রাডার স্টেশন, সিসি টিভি, সোলার প্যানেল, জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনও থাকবে ভাসানচরে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App